স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী জেলায় "শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা"র দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া আবেদনপত্রের কপি ও প্রস্তাবিত স্থানের ২৮ একর খাস জমির কাগজপত্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করা করা হয়েছে।
গত বুধবার(২৫ অক্টোবর -২০২৩)দুপুরে "শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ" এর সদস্য সচিব সাংবাদিক হলধর দাস আবেদন পত্রের কপি, রায়পুরার এমপি রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু ও নরসিংদী সদরের এমপি লে. কর্নেল(অব:)মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক এর ডিউলেটার সহ বিশাল আয়তনের প্রায় ২৮ একর পতিত ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম মহোদয়ের নিকট দাখিল করেন। বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিবের সাথে ছিলেন পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইজ উদ্দিন মোল্লা সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এসময় সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়ে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন- নরসিংদীতে একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা আপনাদের ন্যায় সঙ্গত দাবী।
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় নরসিংদীতেও একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একান্ত আবশ্যক। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখবো এবং বলবো। আপনারাও আপনাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করুন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে জায়গাটি বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি হলো- নরসিংদী জেলা সদরের অতি সন্নিকটে রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর মির্জানগর মৌজায়। সেখানকার পূর্বকান্দি এলাকায় "রহিমাবাদ খামার" এ ১৬ দশমিক ৮২ একর ভিপি 'ক' তফসিলভূক্ত ভূমি সহ আসেপাশে প্রায় ২৯ একর খাস ভূমি বেদখলে রয়েছে। এছাড়া, আসেপাশে অধিভূক্ত করার যোগ্য সম্পূর্ণ স্থাপনা বিহীন /জনবসতি বিহীন পর্যাপ্ত ভূমি রয়েছে, যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সহজেই সম্ভব। স্থানটির সাথে নৌ, জল, রেল ও সড়ক পথের ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ডিন,বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, বাংলা একাডেমী ও একুশে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ডঃ মনিরুজ্জামান এর নেতৃত্বে নরসিংদীতে "শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ" নরসিংদীতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য সহজ উপায়ে বিশাল ভূখণ্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইজুদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে খানাবাড়ি এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মাধ্যমে মির্জানগর মৌজায় বিশাল উল্লেখিত খাস জমির সন্ধান পায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
২০২০ সালে পরিষদের অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে রায়পুরার এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং নরসিংদী সদরের এমপি লে. কর্নেল(অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক মহোদয়কে অভিহিত করলে তারা এতে একমত পোষণ করেন।
মনোহরদী-বেলাব আসনের এমপি মাননীয় শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ২০২০ সালের শেষ দিকে জায়গাটি পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছিলেন, এটি সুন্দর স্থান। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। এটি রাজু সাহেবের নির্বাচনী এলাকা হিসাবে তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনা করেই সামনের দিকে আগাবো। পরবর্তীতে শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব হলধর দাস ও সদস্য জাহিদ হোসেন নিয়ে মাননীয় এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু’র অফিসে গেলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দাবী সম্বলিত একটি ডিও লেটার লিখে দেন।
একইভাবে নরসিংদী সদরের এমপি লে: কর্নেল(অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক মহোদয়ের জাতীয় সংগীত ভবনের কার্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী সম্বলিত আরেকটি ডিউ লেটার গ্রহণ করেন " শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ " এর সদস্য সচিব হলধর দাস, যুগ্ম সচিব হুমায়ুন কবির সরকার ও সদস্য জাহিদ হোসেন।
পরে বিগত ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি ডিও লেটার দু'টি সহ শিক্ষামন্ত্রী বরাবর পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডক্টর মনিরুজ্জামান ও সদস্য সচিব হলধর দাস নরসিংদীর উল্লেখিত স্থানে "শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দাবী জানিয়ে
আবেদন পত্র দাখিল করেন।
ইতোমধ্যে জেলার সকলস্তরের সুধীজন প্রস্তাবিত স্থানে "শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় "প্রতিষ্ঠার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। এটি এখন সময়ের দাবী।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত " জেলা উন্নয়ন কমিটি"র সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নরসিংদীতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রমোশন পেয়ে ঢাকায় চলে যাবার পর বিষয়টির প্রতি পরবর্তী জেলা প্রশাসকগণ কোন পদক্ষেপ সুযোগ পাননি। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদী নরসিংদীবাসী ।