
হলধর দাস : ভূমিকম্পের জন্য নরসিংদী সর্বাধিক বিপজ্জনক ফল্ট লাইন এবং কম্পন পয়েন্ট। এব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও সাধারণ জনগণ বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া বা সচেতনতামূলক কোন কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে, নরসিংদী শহরে শত শত অবৈধ আবাসিক/ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠছে । শহরের পৌরসভা এলাকায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণতা বেড়েই চলছে।
নরসিংদী পৌরসভা এলাকায় এই প্রবনতা সবচাইতে বেশী। গণবসতিপূর্ণি আবাসিক এলাকাসমূহে বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং নির্মানে নিয়মের চাইতে অনিয়মই বেশী। যে সংস্থা এবিষয়ে দেখবাল করার কথা তারাও সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে বলে প্রতিমান হচ্ছে না।
এক দেড় শতাংশ জায়গায় বিনা অনুমতিতে গড়ে উঠছে ৪/৫ তলা বিল্ডিং। তিন শতাংশ জায়গায় দুই/তিন/চার/পাঁচ তলা বিল্ডিং করার অনুমতি নিয়ে গড়তেছেন আট তলা বিল্ডিং।
এব্যাপারে পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) মো: মনির হোসেন বলেন, কবুতর চত্বরে আবুল হোসেন মিয়া'র বিল্ডিং আমার সময়ে প্রথমে আমি দুই তলা পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ ৫তলা পর্যন্ত অনুমোদন পেতে পারেন। কিন্তু শুনেছি ওনি না কি ৮ তলায় উঠে গেছেন। এই বিল্ডিংকে কেন্দ্র এলাকায় দুই গ্রুপ মারমুখী অবস্থায় চলে গেছে বলেও শুনেছি। বিভিন্ন স্থানে এমন বিল্ডিং হচ্ছে। কেউ কাউকে মানছে না। তবে সবকিছু নিয়মের মধ্যে থাকলেই সকলের জন্য হবে মঙ্গলজনক।
পৌরসভার প্রকৌশলী কৃষ্ণ দয়াল রায় গত ২৩ এপ্রিল সকালে বলেন, বিষটি আমরা দেখবো। সার্ভেয়ার আসুক। কিন্তু এলাকার কেউ তো অভিযোগ করেন না। দায়িত্বে থাকা পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি,নরসিংদী জনাব মৌসুমী সরকার রাখী বলেছেন, বিষয়টি আমি দেখছি। পরে আবার বললেন, আমি অলরেডি ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কাজ চলছে। গলায় ঘন্টা কেউ বাঁধতে চায় না। কারণ, অজ্ঞাত কারণে অনেক কিছুই হয় এবং হতে দেখা যায়।
তবে, এলাকাবাসী এব্যাপারে ঐকমত্য যে, পৌর কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের যার যতটুকু অবৈধ স্থাপনা আছে তা আমরা নিজেদের খরচে নিজেরাই ভেঙ্গে ফেলবো।
উল্লেখ্য, গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৮টি ভূমিকম্প হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। বেশির ভাগের মাত্রা ছিল ৪ থেকে সাড়ে ৫–এর মধ্যে।
ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা গত ৫ মার্চ বুধবার অনুভূত ভূমিকম্পটি সম্পর্কে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই ভূমিকম্পটি হয়েছে বাংলাদেশের ভূগর্ভের ডাউকি চ্যুতি নামে পরিচিত চ্যুতিরেখা বা ফাটল বরাবর। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানায়, এর উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২২৮ কিলোমিটার দূরে সিলেটের কানাইঘাট ও ভারতের আসাম সীমান্তের কাছে। ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির কম্পন রাজধানীসহ সারা দেশে ভালোই অনুভূত হয়েছে।
ঢাকার বাসিন্দাদের অনেকেই বলেছেন, ‘ভূমিকম্পে বিল্ডিং এতটা কাঁপতে কখনো দেখিনি।’ দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এই মাত্রা ২০ বছরে সর্বোচ্চ। অতএব, ভূমিকম্পসহ সকল প্রকার ঝুঁকি থেকে নরসিংদীবাসীকে নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা একান্ত আবশ্যক।