হলধর দাস : আগামী বুধবার থেকে নরসিংদী শহরস্থ মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের মেলা। প্রায় সাতশত বছরের পুরাতন এই মেলায় এরই মধ্যে সমবেত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক বাউল। মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন দিন পর্যন্ত চলবে এ মেলা। করোনা বিধি নিষেধের কারণে আটদিন ব্যাপি মেলা সংক্ষিপ্ত করে তিনদিন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাউল আখড়াধামের তত্ত্বাবধায়ক মৃদুল বাউল মিন্টু।
বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে এই বাউল উৎসব। ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এজন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানেন না এখানকার কেউই। সেই বাউল ঠাকুরের স্মরণে তার আখড়া ধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত তথ্য কারো জানা নেই।
সর্বশেষ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবার। বর্তমানে এই মেলায় আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবারের সদস্য সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু ও মলয় বাউল রিন্টু।
এদিকে বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলেপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার। এছাড়া খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন।
বাউল আখড়া বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মৃদুল বাউল মিন্টু বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলার আয়োজন করা হয়। কোনো প্রকার প্রচারণা ছাড়াই প্রতিবছর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠে এই মেলা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাউল মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’