• নরসিংদী
  • শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

মেধাবী শিক্ষার্থী শান্তর মৃত্যুতে নরসিংদীতে শোকের ছায়া


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:২১ পিএম
মেধাবী শিক্ষার্থী শান্তর মৃত্যুতে নরসিংদীতে শোকের ছায়া

স্টাফ রিপোর্টার: 'আমি আমার ছেলের শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারিনি, এর আগেই সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। যাবার সময় সে বলে গেছে, সে আর ভার্সিটির হলে থাকবে না। হলে নাকি পড়ালেখার সমস্যা হয় তাই সে চট্টগ্রাম শহরে একটি বাসা ভাড়া নিবে। এর জন্য তাকে খরচের ৫-১০ হাজার টাকা বেশি দিতে হবে এমনই আবদার করেছিল ছেলেটা আমার কাছে। আমি তার শেষ ইচ্ছাটা রাখতে পারিনি। এমনই ভাবে আক্ষেপ করতে করতে বুকফাটা কান্না জড়িত কন্ঠে চট্টগ্রামে  বাসচাপায় নিহত হওয়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এর পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২)  এর বাবা কাজল সাহা। এসময় শান্তর বাবার হৃদয়বিদারক কান্নায় নরসিংদী পৌর শহরের সেবাসংঘ মন্দিরের আশপাশ এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এসময় স্বজন ও এলাকাবাসীও মেধাবী এই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যূতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে নরসিংদী পৌর শহরের সেবাসংঘে এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী শান্ত সাহার মরদেহ নরসিংদীতে এসে পৌঁছে। এসময় তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

এদিকে মেধাবী ছাত্র শান্তর মরদেহ নরসিংদী এসে পৌছলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন কমিউনিটি নেতাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসে ভীড় জমায়। 

মন্দিরের পাশেই নিহত শান্ত সাহাদের বাড়িতে মা শিউলি রাণী সাহা বুক ও কপাল চাপরাচ্ছে আর আহাজারি করছেন। তিনি বিলাপ করছেন আর কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছে। ‘আমার ইঞ্জিনিয়ার পোলা কই গেলো গো’ বলে বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরা চোখে মুখেসহ মাথায় পানি দিয়ে কিছুটা সুস্থ্য করছেন। মূর্ছা থেকে জ্ঞান ফিরে আবারও একই ভাবে আহাজারি করে বলছেন, ‘আমার সোনার চাক্কা আর নাই, আমিও আর বাঁচতে চাই না। পোলা ইঞ্জিনিয়ার হইয়া বিদেশে যাইব। আমারে কইছিল, “মাগো, তোমারে বিদেশে নিয়া গিয়া চিকিৎসা করামু।” আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই? আমারে কে বিদেশ নিয়া যাইব? আমার পোলারে আইন্যা দেও তোমরা।’ এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা শিউলি রাণী সাহাকে সান্ত্বনা দেন।

নিহত শান্ত সাহা সেবাসংঘ এলাকার বাসিন্দা কাজল সাহা ও শিউলি রাণী সাহা দম্পতির ছোটা ছেলে। এই দম্পতির ৩ ছেলের মধ্যে শান্ত সাহা সবার ছোট। শান্ত সাহার বড় ভাই কৌশিক সাহা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক কোলাউড়া শাখা, সিলেটে কর্মরত আছেন। মেঝো ভাই পার্থ সাহা ভারতের হরিয়ানায় কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবি পড়ছেন। আর সবার ছোট শান্ত সাহা  চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এর পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) শান্ত সাহা  তার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগের দুই জুনিয়র শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে রাঙ্গুনিয়া থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কাপ্তাই সড়কের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায়  পৌঁছলে  শাহ আমানত নামের দ্রুতগামী একটি বাস মোটরসাইকেলটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়।

এতে মোটরসাইকেলের আরোহী শিক্ষার্থীরা ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই শান্তর মৃত্যূ হয়। গুরুতর আহত হন অপর দুজন। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তৌফিককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত হিমু হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পা ভেঙে গেছে। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত  চিকিৎসক জানিয়েছেন,।

নিহত শান্তের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটি বাড়িতে কাটিয়ে গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে নরসিংদী থেকে রওনা দেয়। রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে শান্ত তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ভালভাবে পৌছেন বলে জানায়। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শান্তর সহপাঠীরা তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক সাহার মোবাইলে দূর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর জানান। 

পরিবারের সদস্যরা আরও জানায়, শান্তর মরদেহ আনার জন্য তারা চট্টগ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে ফ্রিজিং গাড়িতে করে তার শান্তর মরদেহ নরসিংদীতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয় তাদের কোনো অভিযোগ নেই, মামলাও করতে চান না তারা।  এসময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তরের অনুরোধ জানান। পরিবারের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রাত ১০টার দিকে লাশবাহী গাড়ি নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে শান্তর মরদেহ নরসিংদী শহরের সেবাসংঘ এলাকা এসে পৌঁছায়। মরদেহ নিয়ে এসেছেন শান্তর হলের দুই সহকারী প্রভোস্ট মাসুম রানা ও সামিউন বশির এবং তার ৭ সহপাঠী।  

শান্তর স্কুলজীবনের বন্ধু সৈকত শাহরিয়ারও পড়াশুনা করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সব সময় একসাথে থাকতেন তারা। মরদেহ বহনকারী গাড়ীতে  তিনিও ছিলেন। সৈকত শাহরিয়ার জানান, ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলের চারতলার একটি কক্ষে থাকতেন শান্ত। সম্প্রতি ছুটিতে বাড়িতে এসে মোটরসাইকেলটি চালানো শিখে ছিলেন সে। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পর সোমবার বিভাগে দুটি ক্লাস হয়। দুপুরে তার হলের এক বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলটি চেয়ে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সাথে ছিল একই বিভাগের দুই ছোট ভাই। ফেরার পথে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এঘটনায় শান্তসহ আরও একজন নিহত হয় এবং অপরজন আহত হয়।

নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দীপক সাহা বলেন, শান্ত একজন মেধাবী ছাত্র ছিলো।  আর এক বছর পরেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠচুকিয়ে পাশ করে বের হতো। আমাদের পাড়ার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা আমাদের জন্যও গর্বের বিষয় ছিলো। শান্তর বাবা-মা ও আমাদের এলাকাবাসীর সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। এর আগেই অকালে প্রাণ হারাতে হলো তাকে। তার এই অকাল মৃত্যূতে আমি ছেলে হারা বাবা-মাকে কি শান্তনা দিবো সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

নরসিংদী জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ও শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার অনিল ঘোষ বলেন, ‘শান্ত সাহার মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তার মা-বাবাকে কি বলে শান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছি না। এমনভাবে যেন কোনো মায়ের বুক  খালি না হয়।’
 

শিক্ষা বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ