বিশেষ প্রতিনিধি: নরসিংদীর মাধবদীতে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্চাচারীতা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ ও নিয়মবহির্ভূত নিয়োগের জন্য রহিমদী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আজমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
এদিকে রহিমদী দাখিল মাদ্রাসার আলোচিত-সমালোচিত অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও নোটিশের কোন জবাব না দিয়ে মাদ্রাসায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে অফিস করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এছাড়াও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া সহ মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট সোমবার সকাল এগারোটায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ গিয়াস উদ্দিন আজম এর বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বীনা আক্তার, অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দীন আজম, অভিভাবক সদস্য মোঃ মোকারম ভূঁইয়া ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে মোঃ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আজম এর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, অবৈধ নিয়োগ, ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ প্রদান, উপবৃত্তির নাম করে ছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, মাদ্রাসার বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ, সরকারী বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চাকুরীবিধি লঙ্ঘন করে নিজ এলাকায় কাজী পদে চাকুরী করে মাদ্রাসা নিয়মিত আসতে না পেরে মাদ্রাসার ক্ষতি সাধন করে আসছেন। তার বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী ও জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি , শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অশোভন আচরণ, নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত না থাকা ও কোরাম বিহীন অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সত্য প্রমানিত হওয়ায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে তাকে সাময়িকভাবে অব্যহতি দিয়ে সহকারী শিক্ষক আবু তাহেরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেইসাথে তাকে স্থায়ীভাবে কেন অব্যহতি দেয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীনা আক্তারের সাথে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ এগারো মাস ধরে আমি মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই এগারো মাস সময়ের মধ্যে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, উপবৃত্তি দেয়ার নাম করে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, মাদ্রাসার ফান্ডের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্র্যাক্তিগতভাবে খরচ করা, অবৈধ নিয়োগ, ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ প্রদান ও চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে নাটোরে কাজী হিসেবে কাজ করা সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ৬ টি লিখিত অভিযোগ পাই। তার এসকল কু-কর্মের কারণে পুরো এলাকা জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এসকল বিষয়ে আমি মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট গিয়াস উদ্দিন আজমকে সতর্ক করে এসব বিষয়ে কারন দর্শাতে নির্দেশ দেই।
এতে করে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন জনকে দিয়ে হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। পরে আমি এবিষয়ে একজন দাতা সদস্য, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি ও একজন জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেই। তদন্ত কমিটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে তার উপর আনীত অভিযোগের সম্পূর্ণ সত্যতা নিশ্চিত হয়ে রিপোর্ট প্রদান করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসার সার্বক কল্যাণ ও এলাকার যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে গত ২৮ আগস্ট জরুরি সভায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সহকারী শিক্ষক আবু তাহেরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
সেইসাথে তার সাময়িক বরখাস্তের অনুলিপি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও ঢাকা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয় বলে ও জানান তিনি।
রহিমদী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আজমের সাথে এব্যাপারে কথা বলতে মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদেরকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নন বলে জানান।
এব্যাপারে জানতে নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাঃ মোবাহারু ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।