![website logo](https://www.jagonarsingdi24.com/webimages/logo.png)
স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ম বহিভূতভাবে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিধিমালাকে আড়াল করে অর্থের বিনিময়ে একজনকে কম্পিউটার শিক্ষক পদে দেওয়া হয়েছে নিয়োগ। এতে সরকারের কোষাগার থেকে খোয়া গেছে লাখ লাখ টাকা।
এমনই একটি অবৈধ শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের একদল সদস্য গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হয়।
নররসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্যরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের কক্ষে এসে নিজ নিজ পরিচয় দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চান বলে জানান।
অভিযোগে জানা যায়, বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে মো. মাহবুব আলমকে সরকারী বিধি উপেক্ষা করে ২২ জুলাই ২০১৫ তারিখে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় ওই শিক্ষকের শিক্ষাগত সদনেও রয়েছে গড়মিল।
যা সরেজমিনে আসা জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের কলম সৈনিকদের চোখে ধরা পড়ে। এসময় কম্পিউটার শিক্ষক মাহবুব আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু তা জানাতে চাইলে জবাবে বিএ (পাশ) বলে তিনি জানান। কোন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছেন এর জবাবে তিনি "ত্রিশাল ডিগ্রি কলেজ" বলে জানান।
সাংবাদিকরা তার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ত্রিশাল শব্দের আগে পরে অন্য কিছু আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন।
অথচ তার সাময়িক সনদে 'নজরুল কলেজ ত্রিশাল ' লেখা রয়েছে। মার্কসীটে লেখা রয়েছে " নজরুল ডিগ্রী কলেজ"।
পরে ওই জালিয়াত শিক্ষকের কাছে তার এসএসসি পরিক্ষার পাশের সাল কত উত্তরে ১৯৮৪ বলে জানান। অথচ, তিনি এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট যা জমা দিয়েছেন, তাতে লেখা রয়েছে ১৯৮৩ সাল।এরপর একে একে এসএইচসি ১৯৮৬ এবং নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ১৯৯৬ সালে বিএ (পাশ) করেন বলে জানায়। এসএইচসি পাশের ১০ বছর পর নিয়মিত পরীক্ষায় নিয়মিত ছাত্র হিসেবে বিএ (পাশ) করলেন বলে জানান।
এরপর তিনি এটাও বলেন যে, আমার সার্টিফিকেট আপনারা যাচাই করার কে? যাচাই করবে মন্ত্রণালয়।
এসময় সাংবাদিকরা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান এইচএসসি পাশের ১০ বছর পর কি তিনি নিয়মিত ছাত্র হিসেবে বিএ পরীক্ষা দিতে পারেন?
তিনি কোন উত্তর না দেননি। যদি তা না হয় তবে কম্পিউটার শিক্ষকের বিএ (পাশ) পরিক্ষার সনদ জাল। তার এই জাল সনদ নিয়োগের সময় কি তাদের চোখে পড়েনি। উত্তরে প্রধান শিক্ষক খেয়াল করেনি বলে জানায়।
এর আগে বালূয়াকান্দি এলাকাবাসীর সাথে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বেশ কয়েকজন সাবেক সদস্যের সাথে কথা বললে তারা জানায় টাকা দিলে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিনের কাছে সবকিছুই সম্ভব। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরকারি বিধির প্রতি বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে সকল নিয়মনীতি লঙ্ঘন আর ভুয়া ও জাল সনদ জমা দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়।
তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগে সর্বনিম্ন ৩ জন নিয়োগ প্রার্থীর উপস্থিত থাকার বিধানকে কোরাম বলা হয়। এর কম উপস্থিতি থাকলে কোরাম হয় না। আর কোরাম না হলে ওই নিয়োগ নিয়ম বহির্ভূত হয়। কম্পিউটার শিক্ষক মাহবুবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
সংবাদ প্রকাশের পর নাম সর্বস্ব তালিকায় কোরাম দেখানো হয়। নিয়োগ বোর্ডে সেই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির স্বাক্ষর সীলের এমনই একটি সীট প্রধান শিক্ষককে সামনে উপস্থাপন করলে তিনি এর কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
২০১৫ সালের ১৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০২.(এম.পি.ও নীতিমালা সংশোধন) ২০১২.২২৬, তারিখ: ১৪/০৬/২০১৫খ্রি: মোতাবেক প্রকাশিত পরিপত্র অনুসারে মো. মাহবুব আলম অযোগ্য প্রার্থী। তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য এই পরিপত্র কার্যকরী হওয়ার দুইদিন পর ১৭ জুন ২০১৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক এবং ১৮ জুন দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকায় নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে।
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপন নিয়েও করা হয়েছে জালিয়াতি ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দিনটি ছিল বুধবার। কিন্তু মাহবুব আলমের নিয়োগের যে ফাইল স্কুলের নথিভুক্ত করা আছে তাতে দেখা যায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের দিন ১২ জুন শুক্রবার এর একটি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা রয়েছে।
অর্থাৎ তিনি ইত্তেফাকের মত ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করেছেন । দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের এই জালিয়াতির বিষয়ে সাংবাদিক দল প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর কোন উত্তর দিতে পারেননি।
২০১৫ সালের ২ জুলাই ইন্টারভিউ গ্রহণ করে ৮ জুলাই ২০১৫ প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব আলমকে নিয়োগপত্র প্রদান করলে ২২ জুলাই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এই জালিয়াত শিক্ষক যোগদানের পর এমপিও ভুক্তির জন্য রায়পুরা শিক্ষা অফিসের এক সভায় শিক্ষা অফিসার তার এ নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে তিনি এমপিও ভুক্ত হবেন না বলে জানান । পরবর্তীতে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ২০১৮ সালের মে মাসে সে এমপিওভুক্ত হন। তার এমপিও কোড নম্বর ১১৪২৩৩৯।
তার এই অবৈধ এমপিওভুক্তির ফলে অদ্যাবধি বেতনভাতা হিসেবে উত্তোলন করেছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
বিদ্যালয়ে কোন অডিট এলে প্রধান শিক্ষক তার অপকর্মের থেকে তাকে বাঁচাতে শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে কোন রকমে গা বাঁচিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকগণ চাকুরীর ভয়ে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক প্রথম চেষ্টায় মাহবুব আলমকে এমপিও ভুক্ত করতে না পারায় যাতে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে না হয় সে জন্য মাহবুব আলমের স্ত্রী শামীমা বেগমকে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ দেন। সেখানেও রয়েছে জালিয়াতি। তার সার্টিফিকেটেও জালিয়াতি থাকতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়।
বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ আশপাশের এলাকাবাসী অবিলম্বে এই জালিয়াত অযোগ্য কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ আনার জোর দাবি জানান।
বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুন্সি শওকত আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেও শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই অবগত নই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান শিক্ষক।
বিষয়টি জানার পর ওই কম্পিউটার শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি মনে করি দুর্নীতি করে যে শিক্ষক পদে নিয়োগ নিতে পারে তার কাছ থেকে জাতি কিছু পাওয়ার আশা করতে পারে না। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের অনিয়মের বিষয়টি পত্রিকার পাতায় দেখেছি। তবে কোন শিক্ষকের অবৈধ নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'