হলধর দাস: নরসিংদীতে এসএসসি পরীক্ষায় নিশ্চিত অংশগ্রহণ করার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েও শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে পারেনি আমিনুল ইসলাম নামে এক প্রধান শিক্ষক। তিনি নরসিংদী ডিজিটাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার স্কুলের নামে ৬ জন শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রবেশপত্র দিতে পারেননি।
এতে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই ৬ শিক্ষার্থী। তারা হলো; চাঁদনী আক্তার, অর্পিতা সুত্রধর, জান্নাতুল ফেদৌস, মেঘলা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার জয়া এবং তৈয়বা আক্তার। এদের মধ্যে তৈয়বা আক্তর নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাকী ৫জন ব্রাহ্মন্দী গালস হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিজ নিজ স্কুল থেকে টেস্ট বা নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পরে তারা নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এর সংগে যোগাযোগ করে। আমিনুল ইসলাম তাদের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা করে জনপ্রতি কন্ট্রাক্ট করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সকল ব্যবস্থা করে দিবে বলে অঙ্গীকার করে। শিক্ষার্থীরা কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী প্রত্যেকেই ২৫ হাজার টাকা করে আমিনুলকে প্রদান করে। আমিনুল ইসলাম এই পরীক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির থাকার কথা বলে। এমতাবস্থায় আমিনুল ইসলাম এর কথামত রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের উপ কেন্দ্র বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে সকল প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য হাজির হয়।
কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়নি এবং তাদেরকে কোনো প্রবেশপত্রও দিতে পারেনি। এতে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং পরে তারা সেখান থেকে ফিরে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি প্রতারক শিক্ষকের বিচার দাবি করে।
এব্যাপারে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মুশফিকুর রহমান জানান, আমরা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের এধরণের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এ অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিবো।
ওই কেন্দ্রের হল সুপার আবু মুছা জানান, দক্ষিণ মির্জানগর আসমতেরনেছা গার্লস হাই স্কুলের নামে নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুলের ৬ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে।
এদের মধ্যে পাঁচ জন পরীক্ষার্থী ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে(রোল নং ৪৫৮১১৭---৪৫৮১২২)। একজন অনুপস্থিত রয়েছে(রোল নং ৪৫৮১১৯)। পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ বাকী ৬ জনের প্রবেশপত্র দেখাতে পারেনি বলে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করা ১৭ জন শিক্ষার্থী হাইরমারা গার্লস হাই স্কুল থেকে ভিন্ন নামে এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মতিন ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের ভুয়া শনাক্ত করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাদের পরীক্ষা বাতিল না করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ অব্যাহত রেখেছিল।