স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণসহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে তাকে অবরোদ্ধ করে রাখে ।
বৃহস্পতিবার (জানুয়ারি) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পযর্ন্ত নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল প্রঙ্গনে ও স্কুলের প্রধান ফটকে এই আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ স্কুলের নানা অনিয়মের বিষয় উপস্থাপন করেন তারা। খবর পেয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা স্কুলে ছুটে আসেন। রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা আসমা সুলতানা নাসরিন এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, নরসিংদী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালরে প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিভিন্ন সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে আসছে। বৃহস্পতিবার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পূর্ব নিধারিত বিদায় অনুষ্ঠানের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগত শিক্ষার্থীদের স্কুলে বা অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকতে দিচ্ছিল না। পরে প্রতিবাদে মুখে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকতে দিলেও ৫ মিনিটের আলোচনার পর বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করে দেয়।
এতে ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয় প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হলেও নিন্ম মানের খাবার বিতরন করা হয়। টিফিনেও নিন্মমানের খাবার দেয়ার প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। শীতের সকালে পিটি (দৈনিক সমাবেশ) নামে শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে শীতের কাপড় খুলে নিতেন।
ফলে অনেক শিক্ষার্থী শীতে জবুথবু হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সবশেষ এসএসসি পরীক্ষার্থী (দশম শ্রেনীর) শেষ ক্লাসের দিনে র্যাক ডে’র আয়োজন করা হয়। ওই সময় ৩৫০ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আদায় করা হলেও, সে অনুষ্ঠান করেনি প্রধান শিক্ষক।
ওই সময় শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে তালা মেরে রেখে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, স্কুলের ৪৬ জন শিক্ষক থাকলেও বিদায় অনুষ্ঠানে মাত্র ৩ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় স্কুলের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবীতে আন্দোলনে নামে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষক শিউলি আক্তার স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্টা ও অর্ধশতাধিক কম্পিউটার ক্রয়সহ স্কুলের উপকরন ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছে। স্কুলের টিফিনসহ সকল উপকর প্রধান শিক্ষকের স্বামী স্কুলে সরবরাহ করেন। যা নিয়ম বহিভূত।
প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষকের রোশানলে পরতে হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারনে এক সাথে স্কুলের ১৫ জন শিক্ষককে অন্যত্র বদলী করা হয়। ফলে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।
গতবছর শাখা সিদুর পড়ে বিবাহিত মেয়েরা এসএসসি পরীক্ষা দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেয়নি। পরে তৎকালীন উপজেলা নিবার্হী কর্মমর্তার হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। যা বিভিন্ন জাতীয় গনমাধ্যমে উঠে আসে।
তবে এসব অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার। তিনি বলেন,স্কুলে কোন রকম অনিময় হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। একই সাথে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।