প্রেম সূত্রে কালু মিয়ার সাথে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান বুলবুলি। পরে জানা গেল, তারা কোর্টম্যারিজ করেছেন। কিন্তু এসম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নিতে রাজি নন বুলবুলির বাবা কেরামত মিয়া। তাই আদালতে কালুর নামে অপহরণ মামলা করেছেন। আদালত কালু মিয়াকে সমন জারি করেন। স্বামীর সাথে বুলবুলিও আদালতে গিয়ে হাজির।
আদালতকে বুলবুলি সাফ জানিয়ে দিল, 'কালু মিয়া আমাকে অপহরণ করে নি, আমি সইচ্ছায় তার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি।'
বিঘা চারেক জমির উপর একটি পুকুর। তার চারধারে নানা ফল-কাঠের সারি সারি গাছ। লিচু গাছটার নিচে একটি মাচা। ষাটোর্ধ কেরামত দরজী একাই মাচায় বসে সিগারেট ফোঁকেন। নানাজাতের মাছের খেলা দেখেন, মাছগুলো যখন খাবার খায় তখন অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নিজের পুকুর পাড়ে বিকেল থেকে রাত দশ-এগারোটা পর্যন্ত বসে সময় কাটান কেরামত। পুকুরের আশপাশে কোন বাড়িঘর নেই, ডানে বামে কিছু ঝোপ জঙ্গল রয়েছে। রাত নয়টা বাজে। আজকে খুব ঘুটঘুটে অন্ধকার। আজ কী তাহলে অমাবস্যার রাত? কে জানে হতেও পারে!
কেরামত দরজী টের পেলেন, একটি মুষ্টিবদ্ধ শক্ত হাত তার নাক বরাবর চলে এসেছে।
কেরামত দরজী হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন, ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে জিজ্ঞেস করলেন- 'কেডা রে?
'--তোর যম! চুপ একদম চুপ, কোন কথা বলবি না!'
কণ্ঠস্বর শুনে কেরামত বুঝতে পারলো, এটা কালু মিয়ার গলা। তাই আকুতিভরা কণ্ঠে বললেন, 'আমারে মাফ করে দে বাজান!'
'--আজ আর তোর কোন ক্ষমা নেই, তোর করা মিথ্যা মামলা এবং সাক্ষীতে আমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল, আজ খালাস পেয়ে বদলা নিতে সরাসরি তোর কাছে চলে এসেছি। এখন মরার জন্য তৈরি হ শালার পুত!' বলে হাতের ছুরিটি শক্ত করে ধরলো কালু।
'--বাবা তোর পায়ে ধরি, তুই আমারে মারিস না, জীবন ভিক্ষা দে?' কেরামতের গলা ধরে এলো।
'--তোর জন্য আমার আট মাসের পোয়াতি বউ আত্মহত্যা করেছে, আমি চৌদ্দ বছর জেল খেটেছি। এখন তুই আমার কাছে জীবন ভিক্ষা চাইছিস? সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর!'----- কর্কশ গলা কালুর। এরপর ছোরাটা কেরামত দরজীর নিথর দেহের কাছে পুঁতে রেখে পুকুরে ঝাপ দিলেন কালু মিয়া।
রচনাকাল : ১ জুলাই ২০২৪