• নরসিংদী
  • শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

গল্প | শালিকের ছানা


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:১৪ এএম
গল্প | শালিকের ছানা

আসাদ সরকার: ছোটো সময় থেকে পাখি পোষা আমার প্রিয় শখ। বন্ধুদের নিয়ে গ্রীষ্মের প্রখর রোদে স্কুল ফাঁকি দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঝোপ ঝারের বড় বড় গাছে উঠতাম পাখির ছানার জন্যে। অনেক সময় গাছে ছানা পেতাম না। সারা দিন টই টই করে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে ঘুরে পাখির ছানা সংগ্রহ করতাম।

মাঝে মাঝে পাখির ছানা ধরে পাখি পোষতে ভালোবাসতো তাদের কাছে বিক্রি করে বন্ধুদের নিয়ে চিড়ার মোয়া, মুরালি, মুড়ি চানাচুট খাওয়া হতো।

কিছু কিছু পাখি আছে বাসা তৈরি করতে পারে না, এর মধ্যে শালিক পাখি একটি। আমাদের গ্রামে শালিক পাখির জন্য মাটির ঘটি গাছের উঁচু ডালে ভালো করে রশি দিয়ে বেঁধে দেয়। এখনে কিছু দিন পর শালিক পাখি এসে বাসা বাঁধে।

কামাল আমার বন্ধু, আমার মত পাখি পোষা তার প্রিয় সখ। তাই সে বাজার থেকে একটি মাটির ঘটি এনে তাদের গাছের ডালে বেঁধে দিলো। কিছু দিন পর তাঁর ঘটিতে দুটি সুন্দর শালিক পাখির জোড়া বাসা বেঁধেছে। বন্ধুদের সবার নজর এই শালিকের দিকে।

কামাল আবার কিছু টা হার কিপটে। কাউকে সহজে কিছু দিতে চায় না। তার ঘটিতে শালিক বাচ্চা দিয়েছে প্রায় ১৫ দিন হয়ে গেছে। আমি অনেক জোরাজুরি করলাম একটি শালিকের ছানা দেওয়ার জন্য। কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।

বললাম তকে আমাদের গাছের বড় বড় দুটি পেয়ারা দিবো, তাও সে রাজি হয় না। কিছু দিন ধরে তার সাথে সারাদিন সময় দেই। বাবা স্কুলে যাওয়ার জন্য নিয়মিত ৫ টাকা করে দেয়। প্রতিদিন তাকে নিয়ে স্কুলের টিফিন করি।বন্ধুত্ব গভীর করার জন্য। সে যা বলে তার কাজও করে দেই।

আজকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে একটা ছানা দিবি বন্ধু? সে আমাকে সরাসরি না করে দিলো। পরের দিন আমি তমাল, আল আমিনের সাথে কথাটা শেয়ার করলাম। তিনজন মিলে যুক্তি করে তার ঘটি থেকে রাতে শালিকের ছানা সড়িয়ে নিলাম। নিয়ে আল আমিনদের বাড়িতে গোয়াল ঘরে রাখলাম।স্কুলে যাওয়ার আগে এবার খাবার ও পানি দিয়ে আসি।

আমার স্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে ফড়িং ধরে নিয়ে খাওয়াই। আল আমিন আর তমালকে গাছের পেয়ারা দিয়ে দুটি ছানা আমি বাসায় নিয়ে আসলাম। তাদের পাখি পোষা আমার মত এত শখ নেই। কামাল স্কুলে আজকে বলছে, বাড়িতে গিয়ে শালিক পাখির ছানা জোড়া গাছ থেকে নামাবে।

একটি বিক্রি করবে আর একটি সে পালবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কত দিন হলো ছানা গুলোর বয়স? কামাল বলে, প্রায় ২০-২৫ দিন হবে। আমি হাসি দিয়ে বললাম, দেখ বড় শালিক নিয়ে হয়তো উড়ে গেছে বাসা থেকে। সে বলে আরে না। তুই আগে গিয়ে দেখ। তুই একটা নিবি কিনা সেটা বল, আমাকে ১০০ টাকা দিলে হবে।

নারে বন্ধু, আমার কাছে টাকা নেই। কথা বলতে বলতে ক্লাস শেষ, টিফিনের সময় হলো। কামাল আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমি কামালকে ফাঁকি দিয়ে একা একা খেয়ে আসলাম। কামালকে আমি কিছুই বুঝতে দেইনি।

বাড়িতে এসে আমি বই রেখে, না খেয়ে মাঠে চলে গেলাম ফড়িং ধরতে। মাঠ থেকে এসে দেখি কামাল আমার বাড়িতে এসে হাজির । আমি মনে মনে অনেক ভয় পেলাম। সে কি সব কিছু জেনে গেছে। তাহলে কি আল-আমীন, তমাল সব বলে দিলো? কিন্ত এমনটা তারা করবে না, এটা আমার বিশ্বাস আছে।

আচ্ছা যাই হোক, কামালকে এ ব্যাপারটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। কামালকে দেখে আমি ফড়িংগুলো লুকিয়ে নিলাম। বললাম কি রে কামাল কি মনে করে আমাদের বাড়িতে?

তকে না স্কুলে বললাম আজকে? (আমি মনে একটু শান্তি পেলাম) আমাদের বাড়িতে চল, গাছ থেকে পাখির ছানা গুলো নামাবো। আমি তো আর তদের মত গাছে চড়তে পারি না। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম, এখন যদি না করি তাহলে সমস্যা।

আবার কামালের সাথে গেলেও সমস্যা। ছানা গুলো না খেয়ে মারাও যেতে পারে। বললাম, কামাল তুই এখন যা আমি আম্মাকে বলে ১০ মিনিট পরে আসছি। কামালকে বিদায় দিয়ে ফড়িং নিয়ে ছানার কাছে গিয়ে আমি নিরব হয়ে গেলাম। আবার যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুটি শালিক ছানার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে খাঁচার ভিতর। আমি জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম। দুষ্ট ইঁদুর আমার ছানা দুটিকে মেরে ফেলো!

সাহিত্য বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ