নূরুল ইসলাম নূরচান
তোমার আমার পরিচয় অনেক দিনের,
কলেজে প্রথম পরিচয় হয়েছিল দুজনের,
তুমিই প্রথম প্রপোজ করেছিলে ভালোবাসার।
আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
এরপর অনেক লেনাদেনা হয়েছে তোমার আমার
যদিও আমি কোন মতেই প্রথমে রাজি ছিলাম না এসবে। তুমি নানা প্রলোভনে আমাকে করায়ত্ব করেছো, ফায়দা লুটেছো ইচ্ছে মতো।
পাকা কথাবার্তা চলছিল আমাদের বিয়ের
অবশ্য আমার চাপাচাপিতেই এসব হচ্ছিল।
হঠাৎ একদিন বললে, 'চলো আমরা ঝাউবন পাহাড় নৈসর্গিক দৃশ্য দেখবো।'
তুমি বললে, আমি পাথরে ফুল ফোটাতে পারি, পারি সাগর সেচে মুক্তামণি আনতে
তাই তোমার কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
আমরা উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বসে গল্প করছিলাম।
তুমি বললে, তোমার কপালে একটা চুমু খেতে
আমি সযতনে তা-ই করলাম।
আমরা দুজন দাঁড়িয়ে ছিলাম খুব কাছাকাছি
তুমি এক ধাক্কায় আমাকে ফেলে দিলে পাহাড় থেকে।
কি অদ্ভুত কান্ড, অলৌকিকভাবে আমি বেঁচে গেছি
চৈতন্য ফেরার পর আমি চারদিক তোমাকে খুঁজি।
না কোথাও কেউ নেই, একমাত্র আমি ছাড়া
পুরোপুরি জ্ঞান ফেরার পর বুঝতে পারলাম-
আমাকে গ্রহণ না করার জন্যই
তোমার এ কৌশল!
আমি ফিরে এলাম আমার গন্তব্যে।
কিন্তু কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারছি না
তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
উন্মাদের মতো হয়ে আমি তোমাকে খুঁজতে লাগলাম।
খবর পেলাম, তুমি কেন্দ্রীয় জেলখানায় আছো-
একটি খুনের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছে তোমাকে।
আমি তোমাকে দেখার জন্য জেলখানায় গেলাম
কিন্তু দেখতে পেলাম না
তুমি আমাকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলে।
অগ্যতা আবার ফিরে এলাম আমি আমার গন্তব্যে।
আমি তোমার ও তোমার মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছি, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে।
একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি-
আমার কালো কেশ রং বদলে সাদা হচ্ছে।
হঠাৎ একদিন খবর পেলাম-
তুমি কারামুক্ত হয়ে বাড়িতে এসেছো
খুশিতে আমি সারা বাড়ি মাতিয়ে তুললাম।
সে কি খুশি আমার, আমি ঘরণী হব তোমার।
আমি ছুটে গেলাম তোমার কাছে,
কিন্তু আমাকে দেখে তুমি খুশি হতে পারলে না
অবাক কণ্ঠে বললে, 'তুমি এখনো বেঁচে আছো!'
আমি জবাব করার আগেই তুমি আমাকে বিদায় দিলে।
আমি চলে আসার আগে তুমি জড়তার কণ্ঠে বললে, 'আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করেছি আমি
এখন আর সময় নেই আমার তোমাকে গ্রহণ করার, তোমার কাছে করা ভুলের জন্য নি:শর্ত ক্ষমাপ্রার্থী আমি।'
[কবিতাটি প্রথমে ছোট করে আমার টাইমলাইনে দিয়েছিলাম, পরে সম্মানিত কবিদের অনুরোধে আরো দুটি পর্ব লিখতে হয়েছে, এটি বড় করার আমার কোন ইচ্ছে ছিল না]।