স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে দুই মাসের ওভারর্টাইম এবং বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে থার্মেক্স গ্রুপের আদুরী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। রবিবার (৩০ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শিবপুর উপজেলার কারারচর (বড়ইতলায়) ফ্যাক্টরীর সামনেই মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে তারা।
এসময় মহাসড়কের উপর কাঠ ও টায়ার দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে তারা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদির মোল্লার আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, গত দুই মাস ধরেই ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধ করছেনা কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগেও দেই, দিচ্ছি করে আর তা পরিশোধ করেন নি। বরং দাবী উঠলেই নানা ওযুহাতে শ্রমিকদের ছাটাই করা হতো। এসবের প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠে আদুরী গার্মেন্টসের কয়েক হাজার শ্রমিক।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই প্রান্তে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় দূরপাল্লার বিভিন্ন যান আটকা পড়লে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। ঘন্টা পর ঘন্টা বসে না থেকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এমন কিছু কিছু যাত্রীসহ অনেককে পরিবার পরিজন নিয়ে পায়ে হেঁটে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে দেখা যায়।
‘মোল্লার জবান ঠিক নাই ২৬ তারিখ ওটি পাই নাই।’ ‘মালিক না আসলে রাস্তা ছাড়বো না।’ ‘সকল শ্রমিক এক হও আমাদের দাবি মানতে হবে।’ ‘প্রতি মাসের ১ তারিখে সকল পাওনা পরিশোধ।’ ‘বেতন ছাড়া লোক ছাটাই চলবে না।’ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড এসময় শ্রমিকরা প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
এদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আদুরী গার্মেন্টসের বিভিন্ন আসবাপত্রসহ দরজা-জানালার গ্লাসে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হামলায় ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাব্বির হোসেন, প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা নয়ন মিয়া ও নাসিমা বেগম আহত হয়। তাদেরকে নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।
আকাশ চৌধুরী নামে এক শ্রমিক বলেন, আমাদের দুই মাসের ওভারটাইমের বকেয়া আছে। কর্তৃপক্ষ সেই বকেয়ার টাকা প্রতিদিনের দিবেন বলে জানায় কিন্তু আমরা নিতে গেলে আর আমাদেরকে দেওয়া হয় না। এজন্য আজকে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
বিউটি বেগম নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, ঈদের আগে বেতন নিতে গেলে আমাদের বেতন থেকে ৬৬০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এর বদলে আমাদের হাতে দুই লিটারের একটি সয়াবিন তেলের বোতল ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাজারে একটি দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৩৫০ টাকার কিনতে পাওয়া যায়। অথচ আমাদের মত গরিবদের পেটে লাথি মেরে এমন একটা বোতলের জন্য বাধ্যতামূলক নেওয়া হয়েছে ৬৬০ টাকা। আর আমাদের মধ্যে যারা প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই ছাঁটাই করা হয়েছে। এটা কেমন মানবিকতা? এছাড়া মালিকের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ যখন তখন লোক ছাটাই করে। কখন কাকে ছাটাই করবে তা কেউ বলতে পারবে না। আমরা সব সময় ছাটাই আতঙ্কে থাকি।
এদিকে শ্রমিক আন্দোলনের খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬ টায় আদুরী গার্মেন্টসে আসেন থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদির মোল্লা। গার্মেন্টসের মাঠে তিনি বক্তব্য রাখলেও তার সেই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শ্রমিকরা। তাদেরকে মহাসড়ক ছেড়ে বাড়ী ফিরে যাওয়ার কথা বললেও তারা অবরোধ তুলে নিতে অসম্মতি জানায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ‘মানি না মানবনা’ 'বাটপার বাটপার কাদির মোল্লা বাটপার।' বিভিন্ন রকমের স্লোগান দিতে থাকে। পরে তিনি আবার শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা কি চাও আমি কারখানা বন্ধ করে দেই, তাহলে যাও কালকেই বন্ধ করে দিব। কারখানা বন্ধ হলে আমার কিছু আসে যাবে না বরং তোমাদেরই ক্ষতি হবে।'
শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে তাদের দাবি মেনে নিয়ে দোষী কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় তিনি বলেন, আগামীকাল (সোমবার) ব্যাংক খোলা থাকলে শ্রমিকদের বকেয়া ওভারটাইমের মধ্যে এক মাসেরটা দেওয়া হবে। আর ব্যাংক খোলা না থাকলে মঙ্গলবার পরিশোধ করা হবে। চলতি মাসের বকেয়া ওভারটাইম আগামী মাসে বেতনের সাথে দেওয়া হবে বলে জানান। আর প্রতিমাসে ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধও করা হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় রুমি নামে একজন মহিলা শ্রমিক নেতা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মহাসড়কের যান চলাচল শুরু হয়।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আরেফিন বলেন, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছিলো। আমরা দু-পক্ষের সাথেই আলোচনা করি এবং শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন মালিক পক্ষ এর পরেই শ্রমিকরা আন্দোলনে থেকে সরে দাড়ায়।