স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী রায়পুরায় ড্রেন নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার হাসিমপুর থেকে বটতলী হাটি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সম্প্রতি ড্রেন নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা পৌর এলাকার হাসিমপুর বাজার থেকে বটতলী হাটি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মেসার্স মোমিনুল হক নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই ড্রেন নির্মাণের কাজটি পেলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজটি নিজে না করে সাব কন্ট্রাকে দিয়ে দেয়।পরর্বতীতে স্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের কয়েকজন সদস্য সরেজমিনে এলাকা ঘুরে ড্রেন নির্মানের বিভিন্ন অনিয়ম চোখে পড়ে। ইতোমধ্যে ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ড্রেনের উপরের স্লাভ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এসময় নিম্নমানে ইট, খোয়া, ভিটি বালু ব্যবহার করে স্লাভ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন দৃশ্য সাংবাদিকদের নজরে আসে। শুধু স্লাভই নয় প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কতটুকু মানসম্মত কাজ হচ্ছে প্রশ্ন এলাকার সাধারণ মানুষের। এর আগে পৌরসভায় এত নিম্নমানের সামগ্রী নিয়ে কাজ করা হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। যথাযথ তদারকিপূর্বক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানিয়েছেন।।
ড্রেনের নির্মাণে কাজের মান নিয়ে হাসিমপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একব্যক্তি বলেন, “হুনছিলাম, অনেক টেহার কাম পাইছে রায়পুরা পৌরসভা। ৬ কোটি টেহার কামের যে অবস্থা, মনে অয় না ২ কোটি টেহা খরচ অইবো। আর কি কইতাম কন দিহি। আমরা বাস করি চোরের দেশে। এলাকার মানুষের লাইগ্যা এই উন্নয়ন কাজ হইয়া থাকলে তা কত দিন ব্যবহার করতে পারবো হেইড্যাই এহন দেহনের বিষয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আসলে এই কাজ নিয়ে বলার কিছু নাই। আপনারাই দেখতাছেন। কি রকমের দুই নাম্বারী করতাছে। এত নিম্মমানের ইট-বালু সরকারি কাজে ব্যবহার করে এর আগে আমি কোথাও দেখি নাই। কাজের মান দেইখ্যা মনে হয় এইগুলা দেখার মতো কেউ নাই।
রায়পুরার বটতলী এলাকায় ড্রেনের কাজে অতি নিম্ন মানের কাঁচামাল ব্যবহারের বিষয়ে সাব কন্ট্রাক্টর দানা মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে আমাদেরকে যে ভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। আপনারা এব্যাপারে কথা বলতে চাইলে মেয়র এবং অফিসের সাথে কথা বলেন। অধিকাংশ জায়গায় ড্রেনের উপর স্লাভ না থাকার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে ফিফটি পার্সেন্ট কাজ করার অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আমরা সিক্সটি পার্সেন্ট কাজ করেছি। বাকি কাজ অনুমতি পাওয়ার পর করা হবে। তাছাড়া আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঠিকাদার সাদ্দাম বলেন, আমরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী স্যার ও পৌর মেয়রে নির্দেশক্রমে কাজ করতেছি। যখন কাজ নিয়ে ছিলাম তখন জিনিসপত্রে দাম কত ছিল আর এখন কত? অনেক স্থানে ড্রেনের দুপাড় সমান্তরাল অবস্থায় দেখা যায়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবজায়গায় কাজের মান একই রকম হবে এমনটা বলা যাবেনা। কাজে কোনো রকমের বেজাল নাই। কোন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না।
রায়পুরা পৌরসভা মেয়র মো. জামাল মোল্লা বলেন, আমাদের পৌরসভা থেকে কেউ কাজ পরির্দশন করে না। কাজ পরির্দশন করে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার। আমি এখন ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কথা বললে পরে আমার অফিসে আসবেন সরাসরি কথা বলবো।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রায়পুরা উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি শুরুর সময়ে আমি এখানে ছিলাম না। আমি এখানে নতুন এসেছি। পৌরসভা থেকে কাজটি তদারকি করা হয়। এ কাজের মান সম্পর্কে কোন কথা বলতে চাই না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতি উত্তরে তিনি মেয়র জামাল মোল্লা কাছে থেকে জেনে নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছি। প্রকল্পের গাইড বুকে আমার নোটে যা লেখার আমি তা লিখে দিয়েছি। পরে প্রকল্পের ফাইনাল বিল ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাই তিনি বলেন, না ফাইনাল বিল দেওয়া হয়নি। যেমন কাজ করা হয়েছে তেমনি বিল দেওয়া হবে।