স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে বহু অপকর্মের হোতা নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের আতঙ্ক কথিত যুবলীগ নেতা কালাম সারোয়ার বুলবুল কে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ। তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা নং- ১১(৮) ২৪ । গ্রেপ্তারের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার(২০ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে নরসিংদী শহরের ভেলানগর মহল্লায় অবস্থিত এনকেএম স্কুলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নরসিংদী সদর থানার এস আই শাহিন সঙ্গীয় ফোর্স সহ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত বুলবুল এর বিরুদ্ধে একাধিক জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়। তার বিরুদ্ধে নারী, অর্থ কেলেঙ্কারীসহ একাধিক মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহতের চিকিৎসা না দিতে সে জেলা ও সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকমীদের বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বুলবুল আটক হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
কালাম সারোয়ার বুলবুল নরসিংদী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নিম্নমান সহকারী হিসেবে যোগ দিয়ে কয়েক বছর যেতে না যেতেই নিয়ম নীতি লঙ্গন করে অবৈধ তদ্বিরের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করেই ষ্টেনো টাইপিস্ট পদ নিয়ে নিযুক্ত হন জেলা সিভিল সার্জনের পিএ হিসেবে। সেখান থেকে শুরু হয় স্বাস্থ্য বিভাগে তার দুর্নীতি ও নানা অপকর্ম । জেলাব্যাপী গড়ে উঠে তার অপকর্মের নেটওয়ার্ক। সরকারী কর্মকর্তাকর্মচারীদের বার্ষিক শারিরিক ফিটনেস সার্টিফিকেট বাণিজ্য। জেলাব্যাপী শতাধিক ক্লিনিক ডায়াগনোস্টি সেন্টার এর লাইসেন্সের নামে এককালীন, এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মাসিক ফি আদায়। আদালতের মামলার বিষয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে বুলবুল। দুর্নীতির মাধ্যমে নরসিংদী শহরে চারতলা বিল্ডিংসহ একাধিক বাড়ী, বিভিন্ন মার্কেটে দোকানপাট ক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাড়ী, ও শহরতলী এলাকায় নামে বেনামে মূল্যবান জমির মালিক বনে যায়। তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের পরিমান শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
ছোট পদে চাকুরী করে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হওয়ায় তার উপর চোখ পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক কার্যালয়ে তদন্ত শুরু হয়। প্রতিমাসে একবার তাকে দুদক কার্যালয় ঢাকা গিয়ে হাজির হতে হয়।
বিগত সরকার আমলে যুবলীগের নেতাদের সাথে গড়ে তোলে সখ্যতা। সে ফেসবুক পেজে ছবির উপর যুবলীগ লিখা কভার ফটো দিয়ে যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতে থাকে। নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে তার দুর্নীতির জাল বিস্তার করতে থাকে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ ও শিল্প মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগের টেন্ডার, নিয়োগ বদলী, সার্টিফিকেট বাণিজ্য।
কালাম সারোয়ার বুলবুল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রায় ২ বছর পূর্বে নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করে। বিভাগীয় মামলা থাকা সত্ত্বেও মামলা নিষ্পত্তি না করে সে অবসর গ্রহন করে অবসরকালীণ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অবসর গ্রহণের পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে বুলবুল। এবার যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপর একছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করতে থাকে। টেন্ডার, খাদ্য সরবরাহ, আউট সোর্সিং, প্রতিটি বিবয়ে সে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তার কথা না শুনলেই তার উপর নেমে আসে মানুষিক নিযার্তন। নামে বেনামে তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিতে থাকে। মিথ্যা অভিযোগ থেকে বাঁচতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে তার সাথে গোপনে লিয়াজো করে চলে । এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ সত্য প্রমাণিত না হলেও তদন্তের নামে হয়রানীর শিকার হয় তারা। স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী করার সুবাদে কীভাবে অভিযোগ করলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নাজেহাল করা যায় তা তার জানা আছে। তাই যখনি কোন কর্মচারী বুলবুলের কথা না শুনে এমনি মিথ্যা অভিযোগ করা হয় তার বিরুদ্ধে।
সরকারী চাকুরীজীবিদের মেডিকেল সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিতো লক্ষ লক্ষ টাকা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খুন-জখম হলেই শুরু হতো তার মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্য। বুলবুলের পক্ষ থেকে গোপনে মামলার বাদী ও আসামীদের সাথে যোগাযোগ করা হতো। গুরুত্বর ইনজুরীকে নরমাল ইনজুরী, আবার নরমাল ইনজুরীকে গুরুত্বর ইনজুরী এমনকি খুনের ঘটনায় স্বাভাবিক মৃত্যু দেখিয়ে সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলে উভয় পক্ষ থেকে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা। জেলা ব্যাপী প্রতিটি হাসপাতালের সার্টিফিকেট প্রদানকারী ডাক্তার ও কর্মচারীদের সাথে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। এভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বুলবুল হাতিয়ে নেয় বছরে কোটি কোটি টাকা।
সম্প্রতি একাধিক মিডিয়ায় বুলবুলের নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হলে অনেকটা গোপনে জেলা সিভিল সার্জন অফিস, জেলা সদর হাসপাতাল, জেলা ১শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালসহ উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে বুলবুল। অনেক অফিসে প্রভাব খাটাতে গিয়ে সেখানের কর্মচারীদের বাধাঁর মুখে পড়তে হয় তাকে।
ইতোপূর্বে কালাম সারোয়ার বুলবুলের নানা অনিয়ম দুণীর্তি, টেন্ডারবাজি, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, তদ্বির ও নারী কেলেঙ্কারীর বিষয়ে স্থানীয় জাতীয় ও অন লাইন মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রচার হয়। তার পরেও র্নিলজ্জ বুলবুল দলীয় ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম, হয়ে উঠে নরসিংদী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুর্তিমান আতংক।