স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরায় স্থানীয় ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসকরের বাবাকে মারধর করা ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আল মামুনের বাবা মোয়াজ্জেম হোসেনকে (৫৯)কে স্থানীয় সামসুর চায়ের দোকানের সামনে মারধরে এঘটনা ঘটে। এঘটনায় ওই চিকিৎসকের পিতা ভুক্তভোগি মোয়াজ্জেম হোসেন ওইদিন রায়পুরা থানা একটি মামলা দায়ের করেন।
আহত মোয়াজ্জেম হোসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, রায়পুরা পৌরসভার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে তাজুল ইসলাম (৬০), তার ছেলে তালেব খান (৩২) ও অলিপুরা ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মোকলেস (৫৫)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আল মামুন স্থানীয় সিরাজখান ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে এক রোগীকে আলট্রাসনোগ্রাফের জন্য না পাঠিয়ে ব্যবস্থাপত্রে নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসকের কাছ থেকে তা করিয়ে আনার পরামর্শ লিখে দিলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তাজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত এই হামলার ঘটনা ঘটায় বলে শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ডা. আল মামুন সম্প্রতি এক রোগীকে তার ব্যবস্থাপত্রে আলট্রাসনোগ্রাফ পরীক্ষা করার জন্য দেন। পরে রোগী সিরাজখান ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করে রিপোর্ট ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু রিপোর্টি অস্পর্ষ্ট ও ফলাফল না থাকায় নরসিংদী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পুনরায় পরীক্ষা করিয়ে আনার পরামর্শ লিখে দেন।
বিষয়টি জানতে পারে ডা. মামুনের উপর ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারের মালিক তাজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়। এসময় ওই চিকিৎসককে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডাক্তারের বাবা মোয়াজ্জেম নাস্তা করতে হাসপাতালের সামনের সামসুর দোকানে গেলে তাজুল, তালেব, মোকলেস সহ আরো কয়েকজন দা, রড, হকিস্টিকসহ তার উপর হামলা করে। এসময় তাকে মারধর করে নগদ অর্থ ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানায়, তাজুল প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালের সকল টেস্ট তার ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে করায়। রিপোর্ট গুলো ভূল ও মানসম্মত না হওয়ায় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে বেগ পোহাতে হয়। ডা. মামুন অন্যত্র পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়ায় তার বাবার উপর দলবল নিয়ে তাজুল হামলা চালায়।
এদিকে বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়কে জানানো হলে সেখান থেকে উপজেলা প্রশাসনকে এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় । পরে উপজেলা প্রশাসন রাতে ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারটিকে সিলগালা করে দেয়। সেই সাথে ওই চিকিৎসককের বাবা মোয়াজ্জেম হোসেনের করা মামলায় প্রেক্ষিতে তাজুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী মোয়াজ্জেম হোসেন রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সদ্য অবসরের যাওয়া একজন কর্মকর্তা। তার ছেলে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক। বিষয়টি আমাকে জানানো হলে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে উপজেলা প্রশাসন ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারটি সিলগালাসহ অভিযুক্ত তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।