• নরসিংদী
  • রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

ক্রেতা সংখ্যা কম দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাটে 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৫৩ পিএম
ক্রেতা সংখ্যা কম দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাটে 

স্টাফ রিপোর্টার: মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রমজানের আগ থেকেই দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী কাপড়ের বাজার নরসিংদীর (শেখেরচর) বাবুরহাটের দোকানিরা নতুন নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বেচা-কেনায় অনেকটাই মন্দাভাব দেখা গেছে দেশীয় কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারী এই বাজারের। রমজানের একমাস আগ থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ক্রেতায় মুখর থাকার কথা থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক মন্দাভাবের ফলে এবার ক্রেতা সংকটে বাবুরহাটের ঈদ বাজারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ঈদের কয়েকদিন বাকী তারপরেও বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা লোকসানের হার কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশায় বুক বেধে আছে। 

নরসিংদীসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপন্ন প্রায় সব ধরণের দেশীয় কাপড় মেলে এই বাজারে। ঈদ উপলক্ষ্যে বাজারের ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজার দোকানে নিত্য নতুন ডিজাইন করা পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চলে ঈদ বাজারের পাইকারি বেচাকেনা।

এই হাটকে ঘিরে নরসিংদী জেলাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। একই সাথে কয়েকশ তাঁত সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী কাপড়ের বাজার নরসিংদীর (শেখেরচর) বাবুরহাট ঘুরে খুব একটা ক্রেতা সমাগম দেখা যায়নি। ক্রেতা সংকটের কারণে অনেকটা অলস সময় পার করতে দেখা গেছে দোকানিদের। নেই কুলিদের সেই হাক-ডাক। শেষ মূহুর্তে এসে দুএকটি দোকানে জাকাতের শাড়ি লুঙ্গি কিনতে দেখা গেলে তা যত সামান্য বলে জানায় দোকানীরা।

ব্যবসায়ীরা জানায়, অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে এ হাটে ৫ হাজারেরও অধিক দোকান আছে। এক সময় কেবল রবিবারেই হাট বসত। বর্তমানে সপ্তাহে ৩ দিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ সামনে রেখে পুরো সপ্তাহ এখন চলছে কেনাবেচা।

দেশীয় কাপড়ের অন্যতম পাইকারী বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে শাড়ী, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি কাপড়, শাটিং কাপড়, বিছানা চাদর, পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে গামছাসহ পাওয়া হরেক রকমের কাপড়। আর এসব কাপড় আসে স্থানীয় তাঁত ও তাঁত সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। একই সঙ্গে দেশের প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানী, কাঁতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের সম্ভারে বাবুরহাটের সংগ্রহকে করেছে সমৃদ্ধ।

তবে এবার অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকায় বাবুরহাটের নেই সেই বাবুগিরি। ডলার সংকটসহ দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতির প্রভাবে কাপড় উৎপাদনে খরচবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটসহ নানা কারণে কাপড়ের বাজারে মন্দাভাব পড়ছে। কাপড় বেঁচা-কেনা হ্রাস পেয়েছে । রমজানের আগেই প্রতিটি দোকানে বাহারি ডিজাইনের কাপড়ের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ঈদে আগে শেষ হাটে এসেও এখনো অর্ধেক কাপড় বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ফলে এবারের ঈদ বাজারের ভরা মৌসুমেও ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ।
 
বাবুরহাটের ব্যবসায়ী ডিআরপি থ্রি পিছের মালিক সুশিল চন্দ্র সাহা বাসসকে বলেন, আমরা সারা বছর ঈদ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। এইসময় আমাদের কাপড়ের অনেক চাহিদা থাকে। সেজন্য আমরা বিভিন্ন প্রকার ত্রি-পিছসহ থান কাপড় স্টক করে রাখি । এবার বাজারে আশানুরূপ পাইকার নেই, নেই বেচা-কেনার ধুম। ঈদের আগে আজ বৃহস্পতিবার শেষ হাট জমেছে। এখনো পর্যন্ত আমরা   স্টকে থাকা অর্ধেক কাপড়ও বিক্রি করতে পারিনি। ব্যবসায় লাভতো দূরে থাক যে মূলধন খাটিয়েছি তা তুলে আনতে পারব কিনা সে শঙ্কায় রয়েছি।

অপর ব্যবসায়ী গ্রামীণ থ্রি পিছ ও শাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম পারভেজ বলেন, আমরা সারাবছরই লোকসানে ছিলাম। ঈদ উপলক্ষে লাভের আশা করেছিলাম। কিন্তু বাজারে পাইকার কম থাকায় বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।  লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো না বলেই মনে করছি আমরা।

ঈগল ত্রি-পিছের মালিক মনির হোসেন বলেন, আমরা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও আশানুরূপ পাইকার পাচ্ছি না। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। ঈদে বেচাকেনা করতে না পারলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

এদিকে বেচাকেনায় মন্দাভাব থাকায় অলস সময় পার করছেন দোকানের কর্মচারীরা। তারা বলছে আগে যেখানে সারাদিন ক্রেতায় মুখরিত থাকতো আর এখন ক্রেতাই পাচ্ছি না। দোকানের কর্মচারী নয়ন মিয়া বলেন, প্রতি ঈদে দোকান পাইকারে মুখরিত থাকতো। আমরা দম ফেলার সময় পাইতাম না। এখন দোকানে খালি বসে থাকি। যাও কয়েকজন পাইকার আসে তারা দাম জেনে চলে যায়।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ, এরই মধ্যে ঈদের কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ভীড় জমিয়েছে বাবুরহাটে। থরে থরে সাজানো সেই কাপড় থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খুচরা বিক্রেতারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। প্রতিটি কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে তাঁতীদের পরম মমতার পরশের গন্ধ। তবে ডলার সংকটসহ দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতির কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর কাপড়ের মূল্য কিছুটা বেশী।

তেমনটাই জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি থেকে পাইকারি কাপঁড় কিনতে আসা ক্রেতা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিটি কাঁপড়েই ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে আমরা যেই পরিমাণ লক্ষ্য নিয়ে হাটে এসেছিলাম সেইরকম কাঁপড় কিনতে পারি নি। তারপর ও ঈদে এখানকার কাঁপড়ের চাহিদা থাকার কারণে ৩ লাখ টাকার কাঁপড় কিনেছি।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে বাবুরহাটে থ্রী-পিছ, শাড়ি কিনতে এসেছেন সোহাগ মিয়া। তিনি বলেন, বাবুরহাটে একই জায়গায় হরেক রকমের কাঁপড় পাওয়া যায়। যার কারণে একাধিক হাটে না গিয়ে আমরা বাবুরহাট থেকেই সবকিছু কিনতে পারছি। কাপঁড়ের গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে এখানকার কাঁপড়ের চাহিদা অনেক। যার কারণে প্রতি ঈদেই বাবুরহাট থেকে কাপঁড় নিয়ে ব্যবসা করি।

ঢাকার মহাখালি থেকে হাটে এসেছেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে সহজেই আমরা হাট থেকে কাপঁড় নিয়ে যেতে পারি। আর কাঁপড়ের দাম ও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। তবে এবার দাম একটু বেশি। তারপর ও আশা করছি এবারের ঈদের বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়া যাবে ।

নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থেকে যাকাতের কাপড় কিনতে আসা হুমায়ূন কবির বলেন, যাকাতের কাপড়ের জন্য আমি এই হাটে এসেছি। প্রতিবছরই আমি এই হাট থেকে যাকাতের জন্য শাড়ি লুঙ্গি কিনে নিয়ে যাই। যাকাত দেওয়ার জন্য প্রত্যেকেই কত টাকার যাকাত দিতে পারবে সেটা হিসাব নিকাশ আগেই করে নেয়। এবছর আমার যাকাতের পরিমাণটা হিসাব করে ওই টাকায় কয়টি শাড়ি ও লুঙ্গি কিনতে পারবো একটা ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বাজারে এসে আমার সেই ধারণা পাল্টে গেছে।

এবারের ঈদে বৈচিত্র এসেছে পুরুষের অন্যতম পোষাক লুঙ্গীতে। নানা নাম ও বাহারী ডিজাইনের এ সকল লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে একশত টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা দরে।  আমানত শাহ লুঙ্গির পরিচালক রেজওয়ান কবির শিহাব বলেন, এবার লুঙ্গির ডিজাইনে আমরা নতুনত্ব আনার চেষ্ঠা করেছি। প্রায় ২ হাজার ডিজাইনের লুঙ্গি ঈদের জন্য বাজারে এসেছে। আমরা পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এসব ডিজাইনের লুঙ্গির আশানুরুপ সাড়া পাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারদের মাধ্যমে আমাদের লুঙ্গি দোকানে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে আশা করছি এবারের ঈদে পাইকাররা ও ভালো ব্যবসা করতে পারবে।
 
বাবুরহাট বণিক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি  আবদুল বারিক বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এবছর ব্যবসার মন্দাভাব বিরাজ করছে। প্রতিবছরের তুলনায় এবার হাটের অবস্থা অনেকটাই নাজুক। হাটে মন্দাভাব বিরাজ করলেও এবারের রমজান জুড়ে প্রতি হাটে গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকা। এবারের ঈদ মৌসুমে বাবুরহাটে প্রায় দুইহাজার কোটি টাকার লেনদেনের আশা করা যাচ্ছে। তবে ধারাবাহিকভাবে সুতার দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে কাপড়ের দাম। সুতার দাম স্থিতিশীল থাকলে কাঁপড়ের দামও কম হতো। যার ফলে ব্যবসায়ীদের বিক্রি আরো বৃদ্ধি পেতো।

অর্থনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ