
স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ঘুষ বাণিজ্য ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সহযোগিতায় বিদেশগামী যুবকদের মেডিকেল ফিট সনদে সাক্ষর প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। আর সিভিল সার্জনের নামে এসব অর্থ সংগ্রহ করছেন অফিস সহকারী প্রধান হোসনে আরা বেগম।
এদিকে সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ে বসে তারই নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ তার ইশারা ছাড়া আদর সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করে। অথচ সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবগত করার পরে তার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা: মো: নুরুল ইসলাম।
দক্ষিন কোরিয়া সরকার ইপিএস’ সিস্টেমে বোয়েসেল এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ভাবে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মী নিচ্ছেন। কর্মী নেওয়ার এ প্রক্রিয়া ‘২০০৭ সাল থেকে চালু হয়ে চলমান রয়েছে। প্রথম ধাপ লটারি মাধ্যমিক কর্মী বাছাই করে দ্বিতীয় তাপের সেদেশের বাসায় পারদর্শী এর রেল স্টেশন করানো হয় পরবর্তীতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কেই শুধুমাত্র যাওয়ার সুযোগ করে দেয় কুরিয়ান সরকার।
তৃতীয় ধাপে স্কিল টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী কার্যক্রমের লক্ষ্যে নিজ নিজ জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক মেডিকেল চেকআপ করে মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট নিতে হয়। কোরিয়ান ভাষা শেখার মাধ্যমে এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়াগামী প্রার্থীদের ৯ম ও ১০ম পয়েন্ট রিক্রুটমেন্ট সিস্টেম এ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেটের জন্য বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সনদের জন্য নরসিংদী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে সনদ প্রতি সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরের জন্য নগদ এক হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয় প্রার্থীদের। আর সিভিল সার্জনের নামে অবৈধ ভাবে এসব অর্থ আদায় করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী প্রধান হোসনে আরা বেগম।
এস.এ কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ সেন্টার-এর সহকারি শিক্ষক মো: সোহাগ মিয়া জানান, প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট নিতে হয়রানির শিকার হতে হয়। এর আগে এই মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ৫ শত টাকা করে নেওয়া হতো। পরে বাড়িয়ে ৬ শত টাকা করা হয়ে ছিল। এবছর ১ হাজার টাকা করে না দিলে এই মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবছর এই অবৈধ অর্থ লেনদেনের জন্য জেলার দক্ষিন কোরিয়া গমনী জেলার সাধারণ মানুষ এ হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
সুমন নামে সেবা গ্রহীতা এক ভুক্তভোগী জানান, মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেটের জন্য যে সকল টেস্ট করতে হয় নির্ধারিত ফি দিয়ে টেস্ট করি। পরে টেস্টের কাগজসহ মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট আনতে সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে কাগজপত্র হোসনে আরা আপার কাছে জমা দিলে তিনি সার্টিফিকেট ফি বাবদ ১ হাজার টাকা দাবী করে। পরে তার কাছে ১ হাজার টাকা জমা দিয়েছি।
মতিউর নামে আরো একজন ভুক্তভোগী জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার যাওয়ার জন্য নিধারিত সরকারি সদর হাসপাতাল থেকে টেস্ট করিয়ে মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য কাগজপত্রসহ সিভিল সার্জন অফিসে হোসনে আরা আপার নিকট জমা দিলে তিনি বলেন সার্টিফিকেটের ১ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান। পরে আমিসহ অন্য সবাই ১ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছি। তবে এ টাকার বিপরীতে কোন রিসিট কাউকে দেওয়া হয়নি।
অফিস সহকারী প্রধান হোসনে আরা বেগমের কাছে সরকারি সহযোগীতায় বিদেশগামী যুবকদের মেডিকেল ফিট সনদে স্বাক্ষর প্রতি সিভিল সার্জনের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি ১ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা সরকারি ফি ১শত টাকা করে রিসিট কেটে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা: মো: নুরুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে নির্ধারিত ১০০ টাকা নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে এসব অর্থ আদায়ের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের মহা পরিচালকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।