স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী কারাগারে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র, গুলি লুট ও ৯জঙ্গীসহ ৮২৬ জন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কারাগারের ৫ কর্মকর্তাসহ ৮২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ৭৭ জন কারারক্ষীকে কারা অধিদপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে নরসিংদী কারাগারে সদ্য যোগ দেওয়া জেলার আবু ইউসুফ বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫৯২ জন কয়েদী সেচ্ছায় আদালতে আত্মনসমর্পণ করেছে।
নরসিংদী জেলা কারাগারের জেলার আবু ইউসুফ জানান, নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-ভাংচূর, অগ্নিসংযোগের সময় দায়িত্বে নিয়োজিত জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার ও দুইজন সুবেদারসহ ৫ কর্মকর্তা এবং প্রধান কারারক্ষি ৩জন, প্রধান সহকারি কারারক্ষি ৬জন, কারারক্ষি ৬৩জন ও মহিলা কারারক্ষি ৫জনসহ মোট ৭৭জন কারারক্ষিসহ মোট ৮২ জনেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেল সুপার ও জেলারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, ডেপুটি জেলার ও দুই সুবেদারকে ডি আই জি প্রিজন ও ৭৭ জন কারারক্ষীকে কারা অধিদপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়।পাশাপাশি সকলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ।
নরসিংদী কোর্ট ইন্সপেক্টর (ওসি) ওদেদুজ্জামান বলেন, নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে পাওয়া ৮২৬ জন কয়েদীর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত নুরুল আলম নামে এক জঙ্গীসহ ৫৯২ জন কয়েদী সেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে নরসিংদী কোটের আইনজীবী তারিক বলেন, নুরুল আলম সকালে এসে কোর্টে হাজির হয়ে আমাকে খুঁজতে থাকে। তার এই মামলায় এর আগে কয়েকবার জামিন শোনানি চেয়েছি আমি, আদালত জামিন মঞ্জুর করেনি। গেলো ১৯ শে জুলাই জেলা কারাগার থেকে বন্দী পলায়নের ঘটনায় সেও পলায়ন করে। সে আদালতে আত্নসমর্পণে এলে জানতে পারি পুলিশ তার ভাইকে আটক করেছে। পুলিশ তার জন্য তার ভাইকে আটক করার ঘটনা সে মানতে পারেননি। তাই সে আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্নসমর্পণ করেছে। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে জঙ্গী নুরুল আলম গ্রেফতার হয় এরপর থেকে জেল হাজতে ছিলো। ১৯ জুলাই জেলা কারাগারে দুবৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিলে সে কারাগার থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে ওই দিন পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ জন বন্দীর মধ্যে ৯ জন ছিলেন জঙ্গী। তাদের মধ্যে সিটিটিসির হাতে খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা ও ইসরাত জাহান ওরফে মৌ ওরফে মৌসুমী, র্যাবের হাতে ফারুক আহম্মেদ এবং নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে জুয়েল ভূঁইয়া গ্রেপ্তার এবং নুরুল আলম নামে একজন আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন।৯ জঙ্গীর মধ্যে এখনও পলাতক চার জঙ্গী হলেন, হিজবুল্লাহ মিয়া, আবদুল্লাহ কামরুল, মো. মহিউদ্দীন ও আবদুল আলীম। এই চারজনও আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
এর আগে গত ১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনে ভর করে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-ভাংচূর, অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে ৯জন জঙ্গীসহ ৮২৬ আসামীর সবাইকেই ছিনিয়ে নেয় দূর্বৃত্তরা। পাশাপাশি ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি, খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি লুট করা হয় জেলখানার সব ধরণের অসবাপত্রসহ যাবতীয় মালামাল। ঘটনার পর তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, কারা কর্তৃপক্ষ এবং নরসিংদী জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এছাড়া কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫ টি অস্ত্রের মধ্যে ৪৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামসুল আরেফীন।