স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিদিন হুইল চেয়ারে করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করা কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা (১৩) পায়ে লিখে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। চার হাত পায়ের তিনটিই অপূর্ণ ও অকেজো। কিছুটা হলেও সচল থাকা একটি পায়ের ওপর নির্ভর করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার নারান্দী আলাউদ্দীন নূরানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির নিয়মিত শিক্ষার্থী আয়েশা। বিদ্যালয়'র বেঞ্চিতে বসতে না পারায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটিতে তার জন্য মাদুর পেতে রাখা হয়েছে। তাতে বসেই সে বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় আয়েশাকে ঘরে বন্দি রাখা যায়নি। তাকে থামিয়ে রাখা যায়নি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ থেকে। জীবন সংগ্রামে আয়েশা পরাজিত হলেও নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সে স্বপ্ন দেখে বিশ্ব জয়ের।
উপজেলার হাররদীয়া পূর্বপাড়ার কৃষক কামরুজ্জামানের কিশোরী মেয়ে আয়েশা। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সে। কানেও কিছুটা কম শোনে। কথাবার্তায়ও কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে তার। প্রতিদিন পিতা কামরুজ্জামান হুইলচেয়ার ঠেলে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসে, আবার ছুটি শেষে একইভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে যায়।
আয়শার পিতা কামরুজ্জামান বলেন, জন্ম থেকেই আয়েশা শারীরিক প্রতিবন্ধী। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও পড়ালেখার প্রতি রয়েছে তার অগাধ টান। তার তার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির মূল্য দিয়ে আমরা তাকে স্কুলে ভর্তি করায় এবং তার পড়ালেখা চালিয়ে যাই। আয়েশাকে স্কুলে ভর্তি করার পর থেকেই এ নিয়মে আনা নেওয়া করতে হচ্ছে। বেঞ্চে বসতে না পারায় ক্লাসের ভেতরে মাদুর বিছিয়ে বসে ক্লাসে অংশ নেয় আয়েশা।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী আয়েশা সিদ্দীকা জানায়, চার হাত পায়ের মধ্যে দুটি হাত ও একটি পায়ে নাড়াচাড়া করতে পারে না। সেগুলো নিথর হয়ে শরিরের সাথে লেগে আছে। একটি মাত্র পায় কোন রকমে নাড়াচড়া করতে পারেন। সচল থাকা সেই পা দিয়ে ব্যবহারিক কাজকর্মসহ পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
শত কষ্টের মাঝেও পড়ালেখা চালিয়ে যাবে বলে জানায় আয়েশা। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করার ইচ্ছা পোষণ করে সে। তার সব অপারগতাকে কেবল মাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরে জয় করে চলেছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া এই কিশোরী।
নারান্দী আলাউদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম জানান, পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়েশার পড়াশোনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।