নূরুল ইসলাম নূরচান: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খড়িয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক তারা মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম (৩৫)।প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করা আবুল কাশেম দীর্ঘ আট বছর যাবত গাছের সাথে বসবাস করে আসছেন। তার হাত পা গাছের সাথে শিকলে বাঁধা। সে মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। তাই তাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের লোকজন। ছেড়ে দিলে সে মানুষকে মারধর করেন। তাই রাতদিন ২৪ ঘন্টা গাছের সাথে তার বসবাস। সে মাঝেমধ্যে গান করেন, ইংরেজিতে কথা বলেন। চলার পথে অনেকেই শুনেন তার সুমধুর কন্ঠের গান। তার গাওয়া গানের ১ম কলি, 'এ মিছে দুনিয়ায় কেন বাঁধো দালান ঘর রে মন আমার........।'
প্রায় আট বছর যাবত সে গৃহহীন, আম গাছের সাথে দুটি হাত পা লোহার শিকলে বাঁধাবস্হায় জীবন যাপন করে আসছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, গা বস্ত্রহীন পরনে অর্ধ উলঙ্গ নোংরা লুঙ্গি, মাথায় যেন বালুচর, অনিদ্রা অনাহারে কাটে দিন রাত, তার বন্ধুত্ব ও স্হায়ী বসবাস আমগাছের ছায়া তলে।প্রখর সূর্য তাপ প্রবল ঝড়বৃষ্টি ও শীতের পরশের একমাত্র আশ্রয় স্থান এ গাছ তলায়। অপরিচ্ছন্ন সিলভারের একটি বাটিতে ভাত খেয়ে অভ্যাস, তার হাত মুখ ধোয়ার কোন সুযোগ নেই।
স্থানীয় সংবাদকর্মী ও কবি হাবিবুর রহমান জানান,
'স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল আবুল কাসেম। ১৯৯৮ইং সনে এস,এস সি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করে। পিতার আশা মেধাবী ছাত্র বিধায় কায়ক্লেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে এ পুত্র সংসারে একদিন হাল ধরার ধরবে। কিন্তু বিধি বাম,কলেজে ভর্তি হবার প্রাক্কালে কাসেমের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। বহু বৈদ্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করেছেন,কিন্তু কোন ফল হয়নি।
কাসেমের মেজাজ কোন কোনো কারণে খারাপ হলে সে চেনা অচেনা মানুষের সাথে মারমুখী আচরণ এমন কি মারধর ও করে থাকে। এমনি অবস্থায় কাসেম কোথাও কোন অঘটন ঘটাতে পারে বলে অনেকের পরামর্শ সাপেক্ষে লৌহ নির্মিত শিকল দিয়ে বারান্দায় একটি আম গাছে তার সময় কাটানোর স্হায়ী স্হান করে দিয়েছে তার পরিবার।'
কাশেমের পিতা তারা মিয়া কায়িক শ্রমের বিনিময়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করলেও অন্যের কাছে হাত পাতার মানুষিকতা নেই। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর স্থানীয় মাছিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ আবুল হারিছ রিকাবদার তাকে দেখতে যান এবং তার থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। আবুল কাশেম সুচিকিৎসা করা হলে সে আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে বলে অনেকের ধারণা।তবে চিকিৎসা করার মত অর্থকরী তার পরিবারের নেই।