হলধর দাস: নরসিংদীর রায়পুরার চারাবাগ আইডিয়াল হাই স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির ২০২২ সালের কয়েক হাজার পাঠ্যপুস্তক উদ্ধার করা হয়েছে। বিক্রি করে দেয়ার জন্য নেয়া বইগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর শনিবার (৪ মে,) সকালে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, একজন শিক্ষা কর্মকর্তা সাথে নিয়ে বইগুলো উদ্ধার করেন।মোসলধারে বৃষ্টির মধ্যে বইগুলোউদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার কাজের সময় সিনিয়র শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা স্কুলে ছিলেন না,যিনি এ প্রতিবেদকসহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের গত ৩১ মে জোর গলায় বলেছিলেন যে, আমাদের হাতে আর কোন ভাল বই নাই। যা এনেছিলাম তার সবই আমরা বিলিবন্টন করে দিয়েছি শিক্ষার্থীদের মাঝে। এলাকাবাসীর ধারণা, তাহলে বই সরানোর ক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্যের সাথে তিনিও কি যুক্ত ছিলেন? অরক্ষিত অবস্থানে বইগওলো সরানোর যুক্তি সঙ্গত কোন উত্তর দিতে পারেননি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন। সঠিক চাহিদা পত্র বা বই বিলি করার স্বাক্ষর রেকর্ডও দেখাতে পারেননি বলে জানা গেছে।
বই উদ্ধারের পর বিকেল ৫ টা ২০ মিনিট এবং ৫টা ২৩ মিনিটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। পরে উদ্ধার কাজে থাকা একাডেমিক সুপারভাইজার মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখন আমি কিছুই বলতে পারবো না। আমি কাল লিখিত প্রতিবেদন স্যারের কাছে জমা দিব। প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করে জেনে নিবেন।
উল্লেখ্য, এলাকায় সরকারি পাঠ্য বই বিক্রির জন্য সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উত্থাপনের পর বইগুলো সম্পর্কে জানতে এ প্রতিবেদক আরো দু'জন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক সাথে নিয়ে গত ৩১ মে সরেজমিনে চারাবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে যায়। স্কুলে প্রথমে দুইজন খন্ডকালীন শিক্ষক ছাড়া এমপিও ভূক্ত কোন শিক্ষক পাওয়া যায়নি।স্কুলের আয়া লুৎফা জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন স্যার ট্রেনিংএ গেছেন। এর পরে যিনি আছেন তিনি টিফিনের সময়তো বাসায় খাইতে গেছেন।
সাংবাদিক স্কুলে আসার খবর পেয়ে কথা বলতে এগিয়ে আসেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোঃ মোছলেহ উদ্দিন ও সাবেক অভিভাবক সদস্য আবুল বাশার। কথা প্রসঙ্গে মোঃ মোছলেহ উদ্দিন ,এই স্কুলের সভাপতি একজন সম্মানিত ব্যক্তির বড় ভাই উল্লেখ করে বলেন,এখানে কোন অনিয়ম নাই।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর টিফিন শেষে ভারপ্রাপ্ত প্রাধান শিক্ষকের পক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য আনা বিতরণের অতিরিক্ত বই আছে না বিক্রি করে দেয়া হয়েছে?
তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন,আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যে পরিমাণ বই এনেছিলাম তার সবই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলি করে দিয়েছি। পাশের কক্ষে কয়েকটা নষ্ট বই ছাড়া আমাদের কাছে অতিরিক্ত ভাল কোন বই নাই। অপর একজন শিক্ষক বলেছিলেন,আমাদের স্কুলের নামে আরও দুটি' বিদ্যালয় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তাদের বইও আমরা বন্টন করে দিয়েছি।
অপরদিকে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে স্কুলের পিছনে পঞ্চাশোর্ধ কৃষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দুলাভাই বকুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় যে, সেখানে ৬ষ্ট থেকে ১০ম শ্রেণির ২০২২ সালের কয়েক হাজার পাঠ্যপুস্তক বই রয়েছে। বইগুলো গরুর ঘর আর রান্না ঘরের পাশের কক্ষে কৃষকের ফসলী খাদ্যদ্রব্যের সাথে অযত্ন- অবহেলায় পড়ে আছে। বকুল মিয়া বইগুলো কোত্থেকে এনেছে বা কিনেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইগুলো চারাবাগ আইডিয়াল হাই স্কুলের। স্কুলের দপ্তরী জাহাঙ্গীর মিয়া স্কুলের স্যারের কথা কইয়া আনুমানিক দুই মাস আগে বইগুলো রাইখা গেছে।
এব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র মহোদয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি অবিহিত করলে তিনি বলেন, এটা করে থাকলে, অন্যায় করেছে। তদন্তে প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি জরুরী তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কক্ষে এক সভায় উপস্থিত রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সামালগীর আলমকে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।