স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থ দন্ড সেই সাথে এ হত্যাকান্ডের সহযোগিতা করার কারণে সাগরের সহযোগী মো. মামুন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং লাশ গুম করার অপরাধে দেলোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন নামে হোটেল আল মদিনার দুই জন মালিক ও ম্যানেজার আমির হোসেনকে ৭ বছর করে কারাদন্ড, দশ হাজার টাকা করে অর্থ দন্ডের রায় প্রদান করেছেন বিজ্ঞ আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ শামীমা পারভিন এই রায় প্রদান করেন।
দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর ও তার সহযোগী মামুন মিয়া পলাতক রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সোহরাব হোসেনের মেয়ে মার্জিয়া কান্তার সাথে পটুয়াখালী উপজেলার কুয়াকাটার চরভাগবেরচর গ্রামের আব্দুল গনি মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম সাগরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে সাভারের আশুলিয়ায় জামগড়া বাজারে কান্তা বিউটিপার্লারের মালিক কান্তার সাথে পরিচয় হয় সাগরের। পরিচয় থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেম পরবর্তীতে বিয়েতে গড়ায়। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রী কান্তা জানতে পারে সাগর একটি প্রতারক এবং নারীলোভী লোক। সে একাধিক বিয়ে করেছে।
এরপর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কোলহ শুরু হয়। স্ত্রী কান্তা স্বামীর সাগরের বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে থাকে। এতে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুসারে কৌশলে তাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে উল্লেখিত স্থানে নিয়ে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়।
আদালত সূত্রে আরো জানা যায়, পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় আল মদিনা নামে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর ও আসামী মামুন দুজনে মিলে তার স্ত্রী মার্জিয়া কান্তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার লাশ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে হোটেলের বক্স খাটের নীচে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পরে হোটেলের ম্যানেজার লাশ দেখতে পেয়ে মালিককে খবর দেয়।
খবর পেয়ে মালিক দেলোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন এবং ম্যানেজার মিলে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কুয়াকাটার সমুদ্রে ফেলে দেয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নরসিংদীর তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও মনিরুজ্জামান হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি উল্লেখিত ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
বিজ্ঞ আদালত ১৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে উপরোক্ত রায় প্রদান করেন। তাদের মধ্যে হোটেল মালিক দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও ম্যানেজার আমির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর ও তার সহযোগী মামুন মিয়া জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে।
আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. শাহজাহান মিয়া, এড. আবু তালেব ও এড. মাইনুল হোসেন, জহিরুল হক সজঃল এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি এমএএন অলিউল্লাহ ও মো. আসাদুজ্জামান।