হলধর দাস: গত ২৫ মার্চ ২০২৪, রোজ সোমবার সকাল ১ টায় ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে "আশ্বাস- 'মানব পাচার থেকে উদ্ধার প্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের জন্য" শীর্ষক প্রকল্প'র প্রকল্প অবহিতকরন সভার আয়োজন করে।
উক্ত প্রকল্পটি উইনরক ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা পরিচালনায় সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের অর্থায়নে ৭টি সহযোগি সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০টি জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, নরসিংদী ড. বদিউল আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত সহকারী জেলা কমিশনার মোঃ সাজ্জাদ পারভেজ ও সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মোঃ মোস্তফা মনোয়ার।
এই প্রকল্প অবহিতকরণ সভায় ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ মারুফ এহসান সিদ্দিকী ও সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সেলর ফাতেমা তুজ জোহরা এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনটির পরিচালক জেসিয়া খাতুন। এর পরবর্তীতে উদ্ধার প্রাপ্ত নারী-পুরুষদের উপর নিমিত তথ্যচিত্র "প্রেরণার আলোকশিখা" প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার মোঃ ওমর ফারুক। এরপর প্রকল্প পরিচিতির পরে মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত সকলেই অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে, বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নরসিংদী বলেন, "মানব পাচারের শিকার হয়েছেন এমন লোকদের মানসিক ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে তিনি বা তারা সত্যিইকার অর্থেই মানব পাচারের শিকার হয়েছেন কিনা তা সবার আগে নিশ্চিত হতে হবে। নরসিংদী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সৌদি আরব যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে না পারলে প্রকল্পের যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে না। আমি আশা করবো, যারা এই প্রকল্পের সাথে আছেন তারা সঠিকভাবে উপকারভোগী নির্বাচন করতে কাজ করবেন। আর এক্ষেত্রে যেকোন ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা তা প্রদানে সর্বদা প্রস্তুত আছি।"
সভাপতির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নরসিংদী মোঃ মোস্তফা মনোয়ার, "নরসিংদী জেলা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থান না থাকায় এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ বিদেশমুখী। তবে যারা যান তাদের বেশিরভাগ অল্প শিক্ষিত কিংবা সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা নাই। ফলে তারা সরকারিভাবে না গিয়ে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ায় চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে অনেকেই ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরলেও সবকিছু হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে দেশে ফিরেন। এতে একদিকে যেমন দেশের ভাবমুর্তি বিনষ্ট হয় অন্যদিকে প্রতারিত হয়ে নিজের সবটুকু হারিয়ে পথে বসে যাচ্ছেন বিদেশগামী এসব ব্যক্তিরা। তারা যেন কোন ধরনের প্রতারণা বা পাচারের শিকার না হন এবং তারা যেন এদেশে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। আমরা আশাকরি, সকলের সহযোগিতায় নরসিংদী জেলায় মানব পাচারে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবো।"
অবহিতকরণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) মোঃ সাজ্জাদ পারভেজ, উপ পুলিশ পরিদর্শক (নরসিংদী থানা ) মোঃ আইয়ুব খান, এডভোকেট শিরিন সুলতানা মৌ, রেইজ এর সহকারী পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম, জেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ মখলেসুর রহমান সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
উল্লেখ যে, মানব পাচার হতে উদ্ধার প্রাপ্ত নারী এবং পুরুষদের মর্যাদা ও কল্যাণ পুনরুদ্ধার করা এবং স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ওয়্যারবী এর মাধ্যমে নরসিংদী জেলায় ৬০০জন সারভাইভার (৬৫% নারী) নিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্প গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য, মনোসামাজিক কাউন্সিল সেবা এবং অন্যান্য পুনঃএকত্রীকরণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানব পাচার হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং মানব পাচার হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের সেবা প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং কার্যকরী করে তোলা।