• নরসিংদী
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
website logo

ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ রায়পুরার ৬ যুবকের বাড়িতে শোকের মাতম


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:২৯ পিএম
ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ রায়পুরার ৬ যুবকের বাড়িতে শোকের মাতম

স্টাফ রিপোর্টার: লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে নরসিংদীর রায়পুরার ৬ যুবক। তারা সাগর পথে  রায়পুরা থেকে লিবিয়া পাড়ি জমায়। সেখান থেকে গত ২৫ জানুয়ারি তারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ওই ৬ যুবকের স্বজনরা একথা জানায়। স্বজনরা জানায়, লিবিয়া থেকে নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন তারা। নিখোঁজ ওই যুবকদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নিখোঁজ ৬ যুবক হলেন - রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মোস্তাক আহমেদ, জয়নগর এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া, মহেশপুর ইউনিয়নের সাপমারা এলাকার সাদেক মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া, তুলাতলী এলাকার লিটন মিয়ার ছেলে ইমরান হোসেন, বেগমাবাদ ঝাউকান্দি এলাকার আব্দুল ছালামের ছেলে সায়েম মিয়া, আরশ মিয়ার ছেলে রাকিব হোসেন। 

নিখোঁজ যুবকদের স্বজনরা জানান, স্থানীয় একটি দালালচক্র প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে ইতালিতে। গত ২৫ জানুয়ারি রায়পুরার ওই ৬ যুবকসহ ৪৫ জন নিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় একটি ট্রলার। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন না কি মারা গেছেন, জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তবে ২০ বাংলাদেশির মরদেহ উদ্দারের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সকালে রায়পুরা উপজেলার সাপমারা এলাকায় নিখোঁজ  জুয়েলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি ও আত্মনাৎ। বুক ফাঁটা কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা। তাদের এ কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। ছেলে হারানোর কষ্টে পুরো বাড়ী জুড়ে চলছে শোকের মাতম।

এসময় কথা হয় নিখোঁজ জুয়েলের বাবা সাদেক মিয়া সাথে। তিনি বলেন, তার ছেলে জুয়েল গার্মেন্টসে কাজ করতেন। লিবিয়া প্রবাসী বড় ভাই কালামের মাধ্যমে ওই দেশে যান তিনি। সেখানে তোফাজ্জলের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ জানুয়ারি জুয়েলের সাথে শেষ কথা হয়েছিল তার পরিবারের। এরপর থেকেই তার সাথে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

একই অবস্থা নিখোঁজ থাকা আশিক, মুস্তাক, রাকিব ও ইমরানের। ইতালি যাওয়ার পথে তারাও ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানায় তাদের পরিবার।

নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা বলেন, প্রবাসী তোফাজ্জল ও কবিরের মাধ্যমে ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ওই ৬ যুবক ইতালির উদ্দেশে পাড়ি দেন। কিন্তু ঘটনার ৮দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) দৃষ্টিতে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরীর নৌপথ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

নিখোঁজদের সন্ধান পেতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস নরসিংদীর সহকারী কর্মকর্তা এ কে এম দাউদুল হক বলেন, নরসিংদীর কোনো যুবক নিখোঁজ বা ট্রলার ডুবিতে মারা গেছে, বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আমরা এখনো পাইনি। এছাড়া নিখোঁজদের স্বজনরাও কেউ আমাদের কাছে আসেনি।

রায়পুরা উপজেলা উপজেলা নির্বাহী তর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনায় রায়পুরার ৬ জন যুবক নিখোঁজের বিষয়টি অবগত হয়েছি। তবে নিহতদের স্বজনরা কেউ এখনো আমাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি। ইতিমধ্যে নিখোঁজ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। সেখানে ওই ৬ যুবক আছে কি না নিশ্চিত নয়। আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেখানকার দূতাবাসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। উদ্ধারকৃত রায়পুরার নিখোঁজ ৬ যুবকের মাধ্যে কাউকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে কিনা।

তিনি বলেন, স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে রায়পুরায় রায়পুরার অনেকের অবৈধ পথে ইতালির পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যার ফলে প্রায়শ: নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। মানবপাচারের সাথে জড়িত ওই সকল দালালদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। তবে কোন একটি ঘটনার পরপরই তারা সরে পড়ে। কিছুদিন যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার এলাকায় ফিরে আসে। সেজন্য হয়তো তাদেরকে ধরার সম্ভব হয় না। অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি না দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রসাশেনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছি।

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ