![website logo](https://www.jagonarsingdi24.com/webimages/logo.png)
স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর শেখেরচরে কিশোরী সুমনা আক্তার তিথি (১৩) এর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘরে রাখা টাকা লুট করার সময় বাধা দিলে কিশোরী তিথিকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এসময় তার মা আসমা বেগম (৩৮) কে পিটিয়ে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায লুটেরাগণ।
এঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ১০ লাখ ১ হাজার টাকাসহ হত্যার বিভিন্ন আলামত জব্দ করে পিবিআই সদস্যরা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নরসিংদী পুলিশ লাইনস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান, পুলিশ ব্যুরো পিবিআই পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
গত কয়েকদিন নরসিংদীসহ দেশের ৫ টি জেলায় অভিযান চালিয়ে ওই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার পাঁচই এলাকার ফরিদ হোসেনের ছেলে ও শেখেরচর এলাকার ভাড়াটিয়া মো. রমজান শেখ ওরফে লিমন (২২), তার ভাই হাসিবুর রহমান শান্ত (৩১), নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার গন্ডা এলাকার বাসিন্দা ইনসান মিয়ার ছেলে ও শেখেরচর এলাকার ভাড়াটিয়া মো. কাউছার মিয়া (২০) এবং নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থানার চর গোয়াশ এলাকার মো. আব্দুল খালেক ওরফে বাবলুর ছেলে ও শেখেরচর এলাকার ভাড়াটিয়া মো. ইমন আলী (২১)। তারা নরসিংদীর শেখেরচর এলাকার ভাড়ায় বাড়িতে বসবাস করে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, শেখেরচর বাজার সংলগ্ন এলাকার চা-পানের দোকানী মোফাজ্জল হোসেন মোটা অংকের টাকা তার ঘরে এনে রাখে। তবে কোথা থেকে কিভাবে এতটাকা পেলেন সামান্য চা-পানের দোকানদার মোফাজ্জল হোসেন এবং
এটাকার উৎস কি সে বিষয়ে কোন তথ্য পায়নি পিবিআই সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে, ওই টাকার বিষয়টি জানতে পেরে লুট করার পরিকল্পনা সাজায় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৭ জানুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে লুট করতেই ঘরে ঢুকে গ্রেফতারকৃতরা। এসময় ৭ বছরের প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে বাথরুমে আটক রাখে তারা। পরে বাসায় থাকা টাকা লুট করার সময় বাধা দিলে গৃহবধূ আসমা বেগম ও মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমনা আক্তার তিথিকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় অসংখ্য আঘাত করে মৃত ভেবে চলে যায়। পরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কিশোরী তিথীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গুরুতর আহত মা আসমা বেগমকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
এ ঘটনার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নরসিংদী, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ১০ লাখ ১ হাজার টাকাসহ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত জব্দ করে পিবিআই সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে টাকা লুট ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
মোফাজ্জল হোসেন বাড়ির পাশেই চা-পানের দোকান করতেন। সেখানে নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের। সে সুবাধে বাড়িতে রাখা টাকার বিষয়টি জেনে যায় তারা।
এদিকে তিথি হত্যার বিচার দাবি করে নরসিংদী পিবিআই কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৃহকর্তা মোফাজ্জল হোসেন ঘরে ঢুকে স্ত্রী ও সন্তানকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে কে বা কারা ঠিক কারণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে জানাতে পারেনি গৃহকর্তা মোফাজ্জল হোসেন। পরে তিনি বাদী এ ঘটনায় সদর থানায় অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করেন।