নূরুদ্দীন দরজী
ফেব্রুয়ারি মাস শেষ। মাসটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসকে অনেকে বলেন, ভাষার মাস। এ মাসে চলে সগৌরবে একুশের বইমেলা। অফুরন্ত আনন্দ উচ্ছাসে ভরা এ মাসটি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমরা বাঙালি। ফেব্রুয়ারি মাস এলে কেন জানি একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই,এ আবেগ আমাদের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ শক্তিই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম হয়েছি। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আছি। অনেকের ইর্ষার কারণ হয়েছি।
১৯৫২ সালে বাঙালি জাতি এক ও একত্রিত হয়েছিল। এর পূর্বে এ জাতি কোনদিনই এমনি ভাবে এক হতে পারেনি। যদিও পাকভারত উপমহাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় বিদেশি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালিদের রয়েছে অনেক গৌরব গাঁথা। বিসর্জিত হয়েছে বাংলার অগণিত মূল্যবান জীবন।বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমরা ছিলাম সব সময়ই অগ্ৰগামী। কিন্তু বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি যেভাবে জেগে উঠেছিল ইতিপূর্বে ততটা জাগতে পারেনি। ভাষা আন্দোলনে আমাদের ছিল বজ্র কঠিন শপথ। ছেড়ে দেইনি এক বিন্দু ও। একটি ভাষার জন্য মানুষ এমন ভাবে জীবন উৎসর্গ করতে পারে আমাদের ছাড়া বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও নেই। এ আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল আমাদের সন্তান ছাত্রগণ।
বায়ান্ন সালে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম পরবরর্তীতে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। তা বজায় রাখতে পারার কারনেই ৬৬-র ছয়দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন সহ সকল আন্দোলনে আমরা সফল হতে হতে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে স্বাধীন হয়েছি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এখন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমরা গর্বিত বাঙালি জাতি। দীর্ঘ শোষণ নিপীড়ন ও বঞ্চনার কালিমা লেপন করে আজ আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে । আমাদের জিডিপি বেড়েছে অনেক। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা অবশ্যই হবো উন্নত জাতি। আমাদের পতাকা থাকবে সর্বোচ্চে।
আমাদের ঐ মহান ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই আছে। বায়ান্ন সালে বাঙালির রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিল বলেই আমাদের মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রুপান্তরিত হয়েছে। বাঙালির পবিত্র রক্তের নিনাদে আজ সারা দুনিয়ার মানুষের হৃদয় কেঁপে উঠে, রক্তক্ষরণ হয়।। আমরা হতে পেরেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও উদাহরণ। বাংলা ভাষার গৌরব আজ পৃথিবীর সর্বত্র। আমরা করতে পারি উচ্চশিড়। আজকে আলোচনা আর বাড়াবো না। লেখার শিরোনামেই বলেছি বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন আমাদের সকল বিজয়ের সূচিগাগার। একটি মাত্র বাংলা ভাষার জন্য যাঁরা নিজেদের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিলো তাঁদের প্রতি ভালোবাসা , গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।
লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)