স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর মনোহরদীতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে দুই শতাধিক গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বাদল সরকার ও তার স্ত্রী অরিন রহমান। এ ঘটনায় বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের চঙ্গভান্ডা গ্রামে প্রতারক দম্পত্তির বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।
প্রতারক বাদল সরকার উপজেলার চঙ্গভান্ডা গ্রামের হেকিম সরকারের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আফসার উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগী। লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী আফসার উদ্দিন বলেন, চঙ্গভান্ডা গ্রামের বাদল সরকার ও তার স্ত্রী অরিন রহমান (মুনমুন) অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে চিনি ও সয়াবিন তেল ব্যবসার নামে ওই গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
টাকা নেওয়ার কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও লভ্যাংশ না দেওয়ায় এক পর্যায়ে গ্রামবাসী তাদের টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদেরকে মামলার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি ভুক্তভোগী আফসার উদ্দিনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ সহায়তায় কারাগারে পাঠানো হয়। আফসার উদ্দিনকে জেলে দেওয়ার পর তার স্ত্রী ঋণের বোঝা সইতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুত্রবধূর মৃত্যুর তিনদিন পর এই শোকে আফসার উদ্দিনের মা আনোয়ারা বেগমও মারা যায়। এ ছাড়াও অনেক পাওনাদারদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে প্রতারক অরিন রহমান।
আফসার উদ্দিন আরও জানান, ব্যবসার নাম করে তার কাছ থেকে ৭৬ লক্ষ টাকা, চঙ্গভান্ডা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে রকি মিয়ার কাছ থেকে নেয় ৫৫ লাখ টাকা, শহিদুল্লাহর ছেলে রুবেল মিয়ার কাছ থেকে ৩০ লাখ, তার মা নাজমা বেগমের কাছ থেকে ১৩ লাখ, সোবহান মিয়ার ছেলে আলমগীরের ৬০ লাখ, সোনা মিয়ার ছেলে সোহানুর রহমান রিমন ৫০ লাখ হাতিয়ে নেয় বাদল অরিন দম্পত্তি। সংবাদ সম্মেলনে শতাধিক ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন।
ভূক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় সহজ-সরল গ্রামবাসীর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাওনা টাকা চাইতে গেলেই স্থানীয় আ'লীগ নেতারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাত।
চঙ্গভাঙ্গা গ্রামের মুত হাফিজ উদ্দিনের স্ত্রী রাহিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন ‘এই টাকার জন্য আমি বিনা দোষে ২১ দিন জেল খেটেছি। তারপরও ওই টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। এই মহিলার বিচার চাই।’
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পর গোপনে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় বাদল সরকার তার স্ত্রী অরিন রহমান। এরপর থেকে তারা উধাও রয়েছে। গ্রামবাসী তাদের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এদিকে তাদের কোন হদিস না পেয়ে ভুক্তভোগী লোকজন বিষয়টি অবহিত করতে নরসিংদী সেনাক্যাম্পে সেখান থেকে তাদেরকে মনোহরদী থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে ভুক্তভোগী লোকজন মনোহরদী থানা একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বাদল সরকারের বাড়ীতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত সহায়তা করা হবে।’