পলাশ প্রতিনিধি: নরসিংদীর পলাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের পিতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মরহুম আব্দুল মোমেন খানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার চরনগরদীতে পরিবারবর্গ, দলীয় নেতাকর্মী ও বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ মরহুম আব্দুল মোমেন খানের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়ে দিনটির সূচনা করেন । পরে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের পিতা বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভায় দাঁড়িয়ে মঈন খানের মেয়ে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক ডা. মাহরীন খান বলেন, আমার দাদা আব্দুল মোমেন খান দেশ ও দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন, তাই দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি সারাটাজীবন উৎসর্গ করেছেন। বিশেষ করে নরসিংদী এলাকার উন্নয়নের জন্য। দেশে আসার পর আমরা যখন নরসিংদীর মাটিতে পা রাখি ও আশপাশ ঘুরে বেড়াই তখন তাঁর চিহ্ন সব জায়গায় দেখতে পাই।
তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন আমার দাদা মরহুম আব্দুল মোমেন খান। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে বিপ্লবের সময় মানুষের অনুরোধে আমার বাবা ড. আব্দুল মঈন খান রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। পরে আমার দাদার উন্নয়নকাজ গুলো তিনি চালিয়ে গেছেন। রাজনীতি কঠিন একটি কাজ আর এই কাজটি দু'জনেই সততার মধ্যে করে গেছেন। সারাদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে তাঁরা।
জুলাই আগস্টের বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে ড. মাহরীন খান বলেন, এই বিপ্লবের মূলে রয়েছে শিক্ষা এবং কাজ। আমাদের চাকরি দরকার। আগামী দশ থেকে পনের বছরের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো মানুষের জন্য কাজ তৈরি করা।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, স্বৈরাচারেরা যদি মনে করে পূনরায় ক্ষমতায় এসে স্বৈরাচার কায়েম করবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। এদেশের ছাত্র-জনতার শক্তির কাছে স্বৈরাচার পরাজিত হবেই।
ড. মঈন খান বলেন, জুলাই-আগস্টে নরসিংদীর ছেলেরা বাংলাদেশ এবং বিশ্ব ইতিহাসে স্থান করেছে। আবারো যদি কেউ দেশের ক্ষতি করতে চায় তাদের প্রতিহত করা হবে। তবে এজন্য বিএনপির মত সবাইকে জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করতে হবে। তাই বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, যেখানে দিনের ভোট রাতে নয় দিনেই হবে।
পলাশ উপজেলা ও ঘোড়াশাল পৌরসভা বিএনপির আয়োজনে এই স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন দি মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটির চেয়ারপার্সন ও খান ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা খন্দকার।
স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন , উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভুইয়া মিল্টন, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক মো: দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন চিশতিসহ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বরেণ্য রাজনীতিবিদ মোমেন খান ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে নরসিংদী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন এবং ১৯৪২ সালে কলিকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে অনুষদের সদস্য হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। মোমেন খান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং পরে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৮-৭৯ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এদিকে মরহুম আব্দুল মোমেন খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার এক বাণীতে তিনি মরহুমের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, জনগণের নাগরিক অধিকার তথা বাক, ব্যক্তি, চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সংগ্রামে আব্দুল মোমেন খান এর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। তিনি এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন মার্জিত ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন।
বিএনপি ও পূর্বসুরী জাগদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মরহুম আব্দুল মোমেন খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবেও তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তথা দেশ ও এলাকাবাসীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করতে তার অবদান দল ও দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আমি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শুভানুধ্যায়ী ও পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে আবদুল মোমেন খান ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠার পর ছাত্র সংসদের প্রথম 'স্পিকার' (ভিপি) নির্বাচিত হন। তিনি উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে খুবই পারদর্শী ছিলেন, যা তার পরবর্তী পেশা জীবনকেও সমৃদ্ধ করে। একজন সরকারী চাকুরীজীবী হিসেবে আবদুল মোমেন খান যথাযোগ্য সুনাম অর্জন করেন এবং লাহোরে সিনিয়র সিভিল সার্ভিস একাডেমীতে প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করে তৎকালীন রেক্টর ডি কে পাওয়ার (আই.সি.এস) প্রদত্ত প্রশংসাসূচক ভ্যালেডিকটরিয়ান সম্মান অর্জন করেন।
তিনি বলেন, যোগ্যতার নিরিখে আবদুল মোমেন খান বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ চাকুরীর পদ কেবিনেট সচিবের আসনে আসীন হন। তার বুদ্ধিদীপ্ত চাকরি জীবনে তিনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, প্রাদেশিক সরকারের গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সেচ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সচিবের দায়িত্বও পালন করেন অত্যন্ত সফলতার সাথে।