মো.শাহাদাৎ হোসেন রাজু: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নরসিংদীতে প্রায় ৪শ' হেক্টর জমির ফসলসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার দিনভর ঝড়ো হাওয়া আর মুশুলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি, কলা ও রোপা-আমনের ক্ষতি হয়েছে।
নরসিংদী কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ৬ উপজেলায় টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৩ শ' হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও প্রায় একশ' হেক্টর জমিতে হেলে পড়েছে রোপা আমনসহ বাড়তে থাকা বিভিন্ন ফসল। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় শীতের আগাম সবজিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপনে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
জেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে যে, ধান, কলা ক্ষেত ছাড়াও শীতকালীন বেগুন, শিম, লাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, পেঁপে এবং মুলাসহ বিভিন্ন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় অধিকাংশ ক্ষেতে সদ্য লাগানো চারাগুলো পানিতে ডুবে গেছে।
রায়পুরা উপজেলার লোচনপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমার প্রায় দুই বিঘা জমির বেগুন ক্ষেত বৃষ্টির পানি ও ঝড়ের বাতাসের তোরে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে পাশের ফুলকপির ক্ষেতটিও ক্ষতি হয়েছে ।
পলাশ উপজেলার দড়িচর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, আমি বর্গা চাষী। বর্গা নিয়ে ১ বিঘা নিচু জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। টানা বৃষ্টিতে ধানের মাথা পানিতে লেপ্টে গেছে। এর জন্য যে পরিমাণ ফলন আশা করেছিলাম তার অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করছি।
সদর উপজেলার দক্ষিণ শীলমান্দি গ্রামে কলা চাষী বশির আহমেদ বলেন,গতকালে ঝড়ে আমার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে লাগানো কলা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে। অধিকাংশ গাছে আগা ভেঙ্গে পড়েছে। এই কলা ক্ষেতই আমার রুজি রুটির একমাত্র জোগান দাতা। এ অবস্থা আমি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
শিবপুর উপজেলার উত্তর সাধারচর গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, আমি দেড় ১৫ বিঘা জমিতে শিম এবং প্রায় এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছিলাম। পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমিতে পেপে লাগিয়ে ছিলাম। সোমবারের ঝড়ে আমার শিম ও লাউ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার পেঁপে ক্ষেতের প্রায় সব গাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকদেরও।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. ছাইদুর রহমান বলেন, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ৪১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি এবং ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।
বৃষ্টিতে যে সব জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো আবারও আবহাওয়া ভালো হওয়ার সাথে সাথে জেগে উঠবে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব নিরূপনে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা। দুই এক দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।