স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে নিখোঁজের দুইদিন পর একটি ডোবা থেকে মো. রুবেল (১৮) নামে এক টেক্সটাইল শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রতিবাদে হোসেন আলী নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি ও টেক্সটাইল মিলে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে নরসিংদী পৌর শহরের শালিধা দক্ষিণ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে । পরে ফায়ার সার্ভিসের ৬ টি ইউনিট ৫ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত শ্রমিক মো. রুবেল নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার আকাশ মিয়ার ছেলে। তিনি শহরের চৌয়ালা এলাকার ইয়ামিন টেক্সটাইলে শ্রমিকের কাজ করতেন। গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
নিহতের পরিবার ও শ্রমিকরা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে চৌয়ালায় ইয়ামিনের একটি টেক্সটাইলে বিদ্যুতস্পৃষ্ঠ হয়ে একজন শ্রমিক মারা যায়। এর পরদিন বুধবার বিকেলে টেক্সটাইলগুলো বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন টেক্সটাইলে যায় শ্রমিকরা। শালিধা এলাকার হোসেন আলীর ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে গেলে ওই ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরবর্তিতে বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করে দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শালিধায় অবস্থিত হোসেন আলীর ফ্যাক্টরি থেকে বেশ কিছু দূরের একটি ডোবা থেকে রুবেল নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হোসেন আলীর ২টি টেক্সটাইল, ২টি গোডাউন ও ৫তলা একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে সেনা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে সেনাবাহিনী। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে বিকালে গিয়ে দেখা যায়, ফ্যাক্টরিগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভবনগুলো তখনও আগুনের প্রচুর তাপ রয়েছে। মেশিনসহ যন্ত্রপাতি, শ্রমিকদের থাকার ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হোসেন আলীর ৫ তলা বাড়িতে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আসবাবপত্র ও এসি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব দেখতে তখন কয়েকশত মানুষ ভীড় জমিয়েছে।
এসময় কয়েকজন শ্রমিক জানায়, মিল বন্ধ রাখা নিয়ে হোসেন আলীর সাথে শ্রমিকদের ঝামেলা হয়েছিলো। গত বুধবার হোসেন আলীর কারখানার শ্রমিকদের সাথে মারামারির পর থেকে রুবেল নিখোঁজ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে তার কারখানার শ্রমিকরা তাকে মেরে ডোবায় ফেলে রেখেছে। তাই লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিক হোসেন আলীর বাড়ি ও কারাখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে টেক্সটাইল ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, ওই শ্রমিকের হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাকে কে বা কারা মেরেছে তা আমার জানা নাই। আজকে আমার দুইটি ফ্যাক্টরি, দুইটি গোডাউন ও ৫তলা বাড়িতে আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নাঈম ইবনে হাসান বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা আমাদের গাড়ি আটকিয়ে দেয়। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নরসিংদী সদর, মাধবদী ও পলাশের ৬ টি ইউনিট ৫ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফ্যাক্টরির সব জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর বলা যাবে।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, শালিধা এলাকার একটি ডোবা থেকে একজন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।