স্টাফ রিপোর্টার: ইউরিয়া সারের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে নরসিংদীর পলাশে স্থাপিত হচ্ছে নতুন আরও দুটি সার কারখানা। জাইকা ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এদুটি সরকার কারখানা নির্মিত হবে। এ জন্য ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প (১ম সংশোধন)’ একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়।
তথ্য মতে, নরসিংদীর পলাশে বিদ্যমান ২টি ইউরিয়া সার কারখানা যথাক্রমে ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড ও পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডের স্থলে দুটি নতুন সার কারখানা নির্মিত হচ্ছে। নির্মিত এ দুটি কারখানায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন হিসাবে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটানো এবং সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে, পাশাপাশি দেশে ইউরিয়া সারের আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মোট ১৫ হাজার ৫ শ' কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হবে প্রকল্পটির। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন, ব্যাংক অব টোকিও মিটসুবিশি ইউএফজে লি., জাপান এবং এইচএসবিসি, হংকং প্রকল্প ঋণ বাবদ দেবে ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা জোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি কারণে পরে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যেসব বিষয় চিহ্ণিত করে সেগুলো হলো—বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত কারণে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তির বিলম্বে কার্যকর হওয়া, বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের ২৭৪.২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার ৩২৮ লাখ টাকা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে অন্তর্ভুক্তি, সিডি ভ্যাট, রেল লাইন স্থাপন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, লোন ব্যবস্থাপনা ফি, ইনস্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি, কেমিক্যাল পণ্য, মেশিনারিজের জন্য লুব্রিকেন্ট ও ট্রায়াল রানের জন্য গ্যাস ক্রয়। তাছাড়া রয়েছে—আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন অঙ্গ হিসেবে জেনারেল কনট্রাকটরদের আয়কর (চুক্তি অনুসারে), সরকারি বিভিন্ন লাইসেন্স ফি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অডিট ফি ও অনুষ্ঠান খাত সংযোজন, অর্থ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ইকনোমিক কোড বা সাব কোড হালনাগাদকরণ, কতিপয় কার্য ও পণ্য ক্রয়ের পদ্ধতি পুনঃনির্ধারণ এবং কতিপয় কার্য ও সেবা খাতের পরিমাণ পরিবর্তন এবং কোভিড অতিমারির কারণে কারখানা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিলম্ব হওয়া।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে যন্ত্রপাতি/ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ ও স্থাপন করা হবে। সার কারখানার রেল লাইনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। সার কারখানা স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়ন এবং অন্যান্য পূর্ত কাজ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, নতুন আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ ও জেটি, সার সংরক্ষণের জন্য গোডাউন, কাস্টমার মিটারিং স্টেশন নির্মাণ ও দুইটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যানবাহন ক্রয় এবং সংগ্রহ করা হবে। পরামর্শক নিয়োগ (স্থানীয়/বিদেশি) দেওয়া হবে। প্রি-কমিশনিং, কমিশনিং ও পারফরমেন্স গ্যারান্টি টেস্ট রান (পিজিটিআর) এবং কম্পিউটার ও এক্সেসরিজ, অফিস সরঞ্জামাদি এবং আসবাবপত্র কেনা হবে।
কমিশন সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। মন্ত্রণালয়ের এমটিবিএফ’র বরাদ্দ এবং চলমান, নতুন অনুমোদিত ও প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাহিদার মধ্যে যথাক্রমে ১৪১৬৪.৪৯, ১১২৮৩.২৭৪২ ও ৪৮৯৬.১০ কোটি টাকার ঘাটতি ছিল।
সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিজ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষকের কাছে সার পৌঁছে দেওয়া এবং সার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের উল্লেখ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষি খাতে ও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বিধায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৯ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
একনেকে উপস্থাপনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় বিদ্যমান ঘোড়াশাল ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি (জিইউএফএফএল) এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির (পিইউএফএফএল) সন্নিকটে দৈনিক ২৮০০ মেট্রিক টন (বার্ষিক ৯,২৪,০০০ মেট্রিক টন) গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন, আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করা হবে। একইসাথে কৃষি উৎপাদন তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটানো, সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ইউরিয়া সারের আমদানি হ্রাস করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বিধায় প্রকল্পটির অনুমোদনের প্রস্তাব বিবেচনাযোগ্য মর্মে পরিকল্পনা কমিশন মনে করে। এ অবস্থায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাবিত ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ২১ লাখ।
এরমধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ
এবং বিডার্স ফাইন্যান্সিং ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অক্টোবর ২০১৮ হতে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক-এর সানুগ্রহ বিবেচনা ও সদয় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এতে সারের আমদানি নির্ভরতা কমবে। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগটি কল্যাণকর বলে সরকার একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে।