মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে নরসিংদী জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইতিহাসের ব্যতিক্রম একটি নির্বাচন। এবারই প্রথম নিজ দল থেকে ডামি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী দিয়ে উন্মুক্ত নির্বাচনের ইতিহাস গড়া হচ্ছে। জেলার প্রতিটি আসনের দলীয় প্রার্থীর অর্থাৎ নৌকার প্রতিপক্ষ হবে নিজ দলের সাধারণ যাকে বলা হয় নৌকার বিদ্রোহী। মোট কথা হার বা জিত উভয়ই নৌকার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নরসিংদীতে ৫টি আসন ধরে রাখতেই কাজ করছে জেলা আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। অপরদিকে বিএনপি বলছে, নিরপেক্ষ-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মানুষ বিএনপি প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। তবে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী কারাগারে ও পলাতক। ফলে প্রায় প্রতিদিনই দলীয় ভাবে আন্দোলন সংগ্রামের কোন না কোন কর্মসূচি থাকলেও রাজপথে দেখা মিলছেনা বিএনপির কোন নেতাকেই।
আপাতত দৃষ্টি দেশের বিজ্ঞ জনের মনে করছেন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আসছে না বিএনপি। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা কোন আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় কাউকে নির্বাচিত হতে দেওয়া যাবে না। সরকার ও দলীয় প্রধানের এ বক্তব্যকে নির্বাচনে অংশ নিতে কোন বাধানিষেধ নেই, দলীয় প্রধানের দেওয়া গ্রীন সিগনাল মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাই এই নির্বাচনে নরসিংদীর ৫ টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হবে আওয়ামী লীগ।
নরসিংদীর ৫টি সংসদীয় আসনে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ থেকে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন-
নরসিংদী-১ সদর আসনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়বেন সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের বর্তমান সাংসদ লে. ক. (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক),। এদিকে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের দাবীর মুখে নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সম্পাদক, নরসিংদী শহর আ’লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী সদরের আসনটি থেকে নির্বাচনে লড়বেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী ও আওয়ামী লীগের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের মো. ছবির হোসেন।
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনটি আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপকে। তবে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হওয়া জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(ইনু) এর পক্ষ থেকে এ আসনটি তাদের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়ার জোড় দাবী জানিয়ে আসছে। জোটের শরিকদের খুশি শেষ পর্যন্ত নরসিংদী-২ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরিবর্তে জাসদ প্রার্থীকে ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে দলীয় বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এমনটা ঘটলে এ আসনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(ইনু) এর সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোড়াশাল জমিদার পরিবারের মিয়া বাড়ীর সন্তুান জায়েদুল কবির। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামের তালিকায় রয়েছেন ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপ-এর সহধর্মীনি আফরোজা সুলতানা, দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক আলতামাশ কবীর, মহিলালীগ নেতৃ তাহমিনা আক্তার লাইলী নির্বাচনে অংশ নিতে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা যায়। জাতীয় পার্টি থেকে এ,এন,এম রফিকুল আলম সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল থেকে জায়েদুল কবির নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নরসিংদী-৩: শিবপুর আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন সাবেক এমপি প্রয়াত রবিউল আউয়াল খান কিরনের ছেলে এবং সদ্য হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত হারণ অর রশিদ খানের ভাতিজা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বি খানকে। মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোহসিনা জান্নাত রিমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া এ আসনে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অবসরে যাওয়া স্কুল শিক্ষক, বাঘাব ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান একে ফজলুল হক ও মো. মাসুদ মৃধা নামে একজন হোমিও চিকিৎসক।
নরসিংদী-৪: (মনোহরদী-বেলাব) আসনটিতে ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য, শিল্পমন্ত্রী এড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য এ এইচ আসলাম সানি মনোনয়ন কিনেন। এছাড়াও মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বীরু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে।
নরসিংদী-৫: (রায়পুরা) আসনে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমান এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজুকে। তার বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য রিয়াদ আহমেদ ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। তারা বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে শোনা যাচ্ছে।