হলধর দাস: নরসিংদীতে কারাবিধি অমান্য করে জেলা কারাগারে রাতের আঁধারে লিজন মোল্লা (৩০) নামে এক হাজতির উপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) সকালে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে নির্যাতনের শিকার লিজন মোল্লার স্বজন এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে লিজনের মা সাজেদা বেগম বলেন, একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গত ১২ জুন আমার ছেলে লিজন মোল্লাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ। ১৩ জুন আদালতের নির্দেশে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
গত ১৮ জুলাই জেল হাজত থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত থেকে পূনরায় জেল হাজতে ফিরে গেলে রাতে কারারক্ষিরা মোবাইল ফোন খোঁজার নামে তার দেহসহ বিছানার আশপাশ তল্লাশি করে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত গভীর হলে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন জেল সুপার শফিউল আলম‘র নেতৃত্বে কয়েকজন কারারক্ষি কারাবিধি অমান্য করে মুখে কালো কাপড় বেধে লিজনের কাছে যায় এবং তার দুই হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মুখে কাপড় বেধে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
এসময় তার পুরুষাঙ্গে বার বার তারকাঁটা দিয়ে ফুটো করে তার পুরুষাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। এক কয়েদির মাধ্যমে জেলখানায় লিজনকে পিটানোর খবর পেয়ে তাকে দেখতে জেলগেটে ছুটে যান তার মা। সেখানে গেলে লিজনের সাথে দেখা করতে দেননি কারা কর্তৃপক্ষ।
লিজনের মা সাজেদা বেগম আরো বলেন, জেল সুপার বাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের প্ররোচনায় আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য রাতের আধারে কারাবিধি অমান্য করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আজ আমার ছেলের জীবন শংকটাপন্ন। তারা আমার ছেলেকে বেধরকমেরে গুরুতর আহত করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য কৌশলে কাশিপুর কারাগারে প্রেরণ করে। আমার ছেলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এ অবস্থায় তার সুচিকিৎসার জন্য আদালতের কাছে জোর দাবি জানানো সহ তার উপর অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লিজনের ছোটভাই লিমন ও এলাকাবাসীর পক্ষে কাজী ইসমাইল খলিল সোহাগ।
এব্যাপারে জেল সুপার মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, গত ১৪ জুন তাকে জেল হাজতে হাজতি হিসেবে রাখা হয়। তার হাজতি নাম্বার ৩১৪৫/২০২২। তার মামলা নং-২৩(০৬)২০২২। পরবর্তীতে ১৮ জুলাই তাকে হাজিরার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে ফিরে এসে জেল গেইটে ঢোকার আগে তার দেহ তল্লাশী করে দুটি ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ ২ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এসব বিষয় নিয়ে হাজতি রিজন মোল্লা গারাগারের অভ্যন্তরে জেল সুপার, জেলারসহ সকলকে হুমকি দিতে থাকে যে, জেল থেকে বেরিয়ে তাদের পরিবারের সকলকে খুন করে ফেলবে। এ বিষয়ে জেলার রিজিয়া বেগম গত ২০ জুলাই নরসিংদী মডেল থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং-১৪৮০।
তাছাড়া ১৭ জুলাই রাত ৮টায় তার কক্ষের কম্বল ও বালিশ ছিড়ে আগুন ধরিয়ে দিলে সেলে অবস্থানরত অন্যান্য বন্দি ও স্টাফদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। এসকল কারণে হাকে হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই মোতাবেক তাকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে পাঠানো হয়।
এব্যাপারে কারাগারে দায়িত্বে নিয়োজিত ডাক্তার মাহমুদুল বাশার জানান, আমার জানামতে কোনো হাজতি অসুস্থ্য এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করেনি।