
রায়পুরা প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরায় গোষ্ঠীগত দ্বদ্ধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় শান্তা ইসলাম (২৪) নামে এক গৃহবধূকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামীদের গ্রেফতারে দাবীতে মানববন্ধন ও থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
এসময় মামলার প্রধান আসামী জেলা যুবদলের সদস্য সোহেল ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবী করা হয়। মানববন্ধনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ফ্যাস্টুন ও ব্যানার বহন করতে দেখা যায়।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রায়পুরা পৌরসভা মাঠে এ মানববন্ধন করা হয়। পরে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি রায়পুরা বাজার হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।পরে বিক্ষোভকারী থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এসময় রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল মাহমুদ এর উপস্থিতিতে শান্তা হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন বিক্ষোভকারীরা।
এসময় সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টার সময় চেয়ে এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামী সোহেলকে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দেন ওসি মো. আদিল মাহমুদ।
এসময়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নিহতের স্বামী ও স্বজনরা বলেন, নিহত শান্তা ইসলাম ২ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন। গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জেরে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সোহেল বাহিনীর সদস্যরা সকলের সামনে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ইতোমধ্যে শান্তা হত্যার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও সোহেলকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ সে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা।
আসামীরা শুধু শান্তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। এ হত্যাকান্ডের কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই হত্যাকারীরা ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খানের বাড়ি থেকে একটি গরু লুট করে ভুরিভোজ করে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা।
শান্তা মামলার বাদী ও নিহতের বাবা আহসান উল্লাহ বলেন, সোহেল ও তার বাহিনীর সদস্যরা বাড়িঘর লুটপাট করে আমার অন্ত:সত্ত্বা মেয়ে শান্তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। শান্তা বিএ অনার্স পাস করে কিছুদিনের মধ্যে তার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিলো। আমি আমার নিরাপরাধ মেয়ে শান্তা হত্যার বিচার দাবী করছি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি শান্তাকে হত্যা করেছে সোহেল। তাকে গ্রেফতার করতে রায়পুরা থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এছাড়াও রায়পুরা থানার ১০ জন এসআই ও ৬জন এএসআইদের নিয়ে একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা সোহেলকে গ্রেফতারে ৭২ ঘন্টার সময় চেয়ে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দুর্গম চর এলাকা সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য। সারাদেশে অপারেশ ডেভিল হান্টের আওতায় বিশেষ অভিযান চলছে। চর এলাকায় যৌথ অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করা হচ্ছে। সর্বশেষ র্যাব আমাদের সাথে যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য রাজি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর হঠাৎ যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠে রায়পুরার চরাঞ্চল শ্রীনগর। ওই ইউনিয়নে পূর্ব শত্রুতার জের ও গোষ্ঠীগত দ্বন্ধে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় বাড়ীঘর ভাঙ্চুরে বাধা দিতে এলা প্রকাশ্যে শান্তাকে গুলি করে। গুলিটি তার পিঠেবিদ্ধ হলে মারা যায় দুই মাসের অন্ত:সত্ত্বা শান্তা ইসলাম। সে ওই এলাকার শাকিল খানের স্ত্রী। ঘটনার একদিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা যুবদল সদস্য ও শ্রীনগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে সোহেল মিয়াকে প্রধান করে ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা আহসান উল্লাহ।