• নরসিংদী
  • শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সুপার-৫ এর ৪ জনই অনুপস্থিত; কার্যক্রমে স্থবিরতা


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪৫ পিএম
নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সুপার-৫ এর ৪ জনই অনুপস্থিত; কার্যক্রমে স্থবিরতা

মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সুপার-৫ কমিটি র ৪ জন অনুপস্থিত থাকায় কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মূলত: নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন কারাগারে বন্দি থাকায় ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গত ১ ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে নরসিংদী জেলা ডিবি পুলিশ পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২২ সালের ৩১ জুলাই ঘোষিত নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সুপার-৫ কমিটির সভাপতি কারাগারে ,  দুই সহ-সভাপতির আলাদা অবস্থান এবং সহ সাধারণ সম্পাদক লন্ডন অবস্থান করছেন শুধু মাত্র সাধারণ সম্পাদক একা হাল ধরে আছেন। পাঁচজনের কমিটির ৪ সদস্যের অনুপস্থিতিতে জেলা সংগঠণটি নিষপ্রাণ অবস্খায় বিরাজ করছে। ফলে কার্যক্রমে এ স্থবিরতা দেখা দেয়।

জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়নি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় অনেকে হযেছে পদ বঞ্চিত। দীর্ঘদিন সংগঠনে জড়িত থেকে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখার পরেও সংগঠণ থেকে নূন্যতম সম্মান না পাওয়া পদ বঞ্চিতরা নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের পথ অনুসরণ করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার একটির নেতৃত্বে আছেন বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহছানুল ইসলাম রিমন ও সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ শাওন। অপরটির নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শিবলী ও ফয়সাল।

জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কাজী মামুনকে আহবায়ক ও ইসহাক খলিল বাবুকে যুগ্ম আহবায়ক করে একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে ৯ অক্টোবর  ইসহাক খলিল বাবুকে সভাপতি ও আহসানুল ইসলাম রিমনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা করা হলেও সেই কমিটিও পুর্ণাঙ্গ ছিলনা। সভাপতি ইসহাক খলিল বাবুর একক স্বাক্ষরে নরসিংদী সরকারি কলেজ শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়া হলে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সভাপতি পদ থেকে তাকে অব্যহতি দিয়ে হাসিবুল হাসান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০২২ সালে ৩১ জুলাই আহসানুল ইসলাম রিমনকে সভাপতি ও শাহজালাল আহমেদ শাওনকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ৫ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। ওই কমিটির সভাপতি পদ প্রত্যাশি ছিল দুই সহ-সভাপতি সিব্বির আহমেদ শিবলী ও সারোয়ার হোসেন ফয়সাল। তারা তাদের কাঙ্খিত পদ না পেয়ে  দুইজনেই অবস্থান নেন আলাদা প্লাটফর্মে। সুপার-৫ এর অন্য তিন জন হলেন সহ-সভাপতি সিব্বির আহমেদ শিবলী ও সারোয়ার হোসেন ফয়সাল এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক আলিফ জোবায়ের। কমিটি ঘোষনার পর থেকে সুপার-৫এর দুই সহ-সভাপতি এই কমিটির বিরোধিতা করে জেলা আওয়ামী লীগের লেজুর ভিত্তিক হয়ে বিপক্ষ গ্রুপে অবস্থান নেয়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা য়ায়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে মতানৈক্যের কারনে তাদের দুজনের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।  কিছু  কিছু বিষয়ে সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন সাধারণ সম্পাদক  শাহজালাল আহমেদ শাওনকে না জানিয়ে  একক সিদ্ধান্তের কারনে তাদের মধ্যে এই মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে  সুপার-৫ কমিটির সভাপতি কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্গনের অভিযোগে গত ১ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। গত ২৯ নভেম্বর নরসিংদী ক্লাবে নৌকার সমর্থনে আয়োজিত জেলা আওযামী লীগের সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মারার হুমকি প্রদান করায় নরসিংদী সদর নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার ওমর ফারুক বাদি হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নরসিংদী ডিবি পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা আহাসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক আলিফ জোবায়ের জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান লন্ডনে। ফলে সুপার-৫কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের এই সময়ে একা হাল ধরে আছেন। ফলে কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে, আসে স্থবিরতা।

তবে এ বিষয়গুলো স্বীকার করতে নারাজ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ শাওন। তিনি বলেন, নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। সভাপতির সাথে কোন বিষয়ে আমার কোন মতানৈক্য নেই। আর সভাপতি কারাগারে থাকলেও সেখান থেকেই দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার সাথে প্রতিদিনই দেখা ও কথা হচ্ছে। এ ছাড়াও কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা ও কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে সেগুলোও যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় নেতা কর্মীরা মূল্যায়িত হচ্ছে না। কেন্দ্রের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, যোগাযোগ হয়েছে। সেই অনুযায়ি পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকাও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক  আমাদেরকে  কথা দিয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হবে।

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সিব্বির আহমেদ শিবলী বলেন, কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে কোন কর্মকােন্ডের বিষয়ে জানায় না, চিঠিও দেয়না, ডাকেও না। আমি এবং অপর সহ-সভাপতি নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম তালেব ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন মূল শ্রোতের সাথে অবস্থান নেয়ায় তারা সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে আমাদের বিরত রেখেছে।  কখন কোথায় কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয় না তাই ইচ্ছা থাকলেও আমরা দুইজন উপস্থিত থাকতে পারিনা। তাই ৫ সদস্যেও এই কমিটির আমরা দুইজন জেলায় শহরে অবস্থান করলেও  কার্যক্রমে আমাদেরকে দেখানো হচ্ছে অনুপস্থিত। ৫ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটির মধ্যে আমরা সহ-সভাপতি দুইজনসহ ৪ জনের অনুপস্থিতে সংগঠনে স্থবিরতা আসবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই বিচক্ষন ও মেধাবী। আশা করব অচিরেই জেলা ছাত্রলীগের সংকট উত্তরণের ব্যবস্থা নিবেন তারা।

নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধরণ সম্পাদক ইসহাক খলিল বাবু বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর যাবত নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটির বিকল্প কিছু নেই। আমাদের দাবি থাকবে ১৫১ বিশিষ্ট্য নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হউক। এতে করে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটি নরসিংদী জেলায় প্রাণ ফিরে পাবে।

উল্লেখ্য, নরসিংদী ছাত্রলীগের জেলা কমিটি ছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে এরকম সংকট নেই বলে জানা গেছে।
 

রাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ