মো.শাহাদাত হোসেন রাজু: আসন্ন নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়া ৩ জন প্রার্থীই প্রতীক বরাদ্দের পর গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রার্থীরা নির্ধারিত ভোটারদের সমর্থন ও মন জয় করার লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জেলার ৬ টি পৌরসভাসহ ৭১টি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের সাথে কুশল বিনিময় ও ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি থেমে নেই সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা তারাও ভোটারদের বাড়ী বাড়ী যাচ্ছেন।
গত সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রচারণায় নেমেছেন চেয়ারম্যান সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য এই ৩ টি পদে ২৪ জন প্রার্থী।
এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, দুটি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন ও সাধারণ সদস্য প্রার্থী পদে ১১ জন সহ মোট ২৪ প্রার্থী তাদের প্রচারনা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা জেলার ৬ উপজেলা, ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৬টি পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। আবার পাশাপাশি মোবাইল ফোনেও বাড়াচ্ছে সখ্যতা।
ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মতিন ভুঁইয়ার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরো দুইজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতিক) প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন তার ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনির হোসেন ভূইয়া ও বিগত জেলা পরিষদের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ জাহান লিটু।
নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে একই দলের অপর দুই জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই দুইজন ক্ষমতাশীন দলটির বিদ্রোহী না থাকলে দেশের অন্যান্য ২১টি জেলার মত নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা জয়ী হতে পারতো। কিন্তু দলীটির আভ্যন্তরিন কোন্দলে তা সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল মতিন ভূঁইয়া স্বতন্ত্র এই দুই প্রার্থীর কাছে কোণঠাসা হতে পারেন বলে দলীয় অনেক নেতাকর্মীরা মনে করছেন। নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আবদুল মতিন ভুইয়ার অতীত কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে ভোটের হিসাব কষছেন অনেক ভোটার ও জেলার সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় পরাজয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও স্পষ্ট করে তুলবে বলে মনে করেন তারা।
নির্বাচনী মাঠে ৩জন প্রার্থীই কৌশলে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গণসংযোগ ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করছেন। শুধু ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনাই নয় স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীও কামনা করে যাচ্ছে এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে এ বছরেই প্রথমবারের মতো প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন জেলা পরিষদ সদস্য এবং তিন উপজেলা মিলে একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মনোনয়ন করা হবে। এজন্য জেলা সদর ছেড়ে নির্বাচনী আমেজ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে সাধারণ সদস্য পদের ৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে ২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকী ৪ টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থীতা দাখিল করলেও ২ জন তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আগামী ১৭ অক্টোবরের ভোটের লড়াইয়ে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি ৩ জনের মধ্যে-বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়া কাপ পিরিচ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।,স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: মনির হোসেন ভূইয়া আনারস প্রতীকে ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ জাহান লিটু মোটর সাইকেল প্রতীকে লড়ছেন।
৪টি ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে মোট ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- ১ নং ওয়ার্ডে দুই প্রতিদ্বন্দ্বি হচ্ছেন মেহেরপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হাসান ও বিগত জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন সরকার। ৩ নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বি ৪ জন হলেন- বিগত জেলা পরিষদের সদস্য রাজিব আহমেদ, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. খোরশেদ আলম ও টিটো মিয়া। ৫ নং ওয়ার্ডে তিন প্রার্থী হলেন-মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম, বিগত জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস সামাদ মোল্লা ও এ কে এম জহিরুল হক। ৬নং ওয়ার্ডে ২ জন প্রার্থী হলেন- বিগত জেলা পরিষদের সদস্য এড. মো. শহিদুল্লাহ এবং মেরাজ মাহমুদ।
এছাড়া দুটি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বি ১০ জন প্রার্থী হলেন- ১নং ওয়ার্ডে সাহিদা খানম, শিউলী পারভীন, বিগত জেলা পরিষদের সদস্য তৌহিদা সরকার, নাজমা আক্তার, মোছা. রাহেলা বেগম ও শাহানাজ বেগম এবং ২নং ওয়ার্ডে মরিয়ম বেগম, বিগত জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান তামান্না, মুন্নী আক্তার ও উম্মে কুলসুম খাতুন।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. মনির হোসেন ভূইয়া বলেন, আমার স্বপ্ন মানুষের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করা। এছাড়াও নরসিংদী জেলা পরিষদকে সিন্ডিকেট মুক্ত করে উন্নয়নের ধারাকে আর গতিশীল করতে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। আমি মনে করি আগামী ১৭ অক্টোবর জেলাবাসীর দোয়া ও জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের রায়ে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারবো ইনশাল্লাহ।
মোটর সাইকেল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ জাহান লিটু বলেন, 'আমি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি এবং তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়াও পাচ্ছি। জেলার উত্তরাঞ্চল শিবপুর মনোহরদী ও বেলাবো এই তিন উপজেলার আমি একমাত্র প্রার্থী। আমাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে তিন উপজেলার ভোটারদের অনেকেই খুশি। আমি মনে করি শিবপুর মনোরদী ও বেলাবো উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের সহ জেলার অন্যান্য উপজেলার ভোটারদের রায় আগামী ১৭ই অক্টোবর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হব, ইনশাল্লাহ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল মতিন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: রবিউল আলম জানান, 'আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৩ জন। ৬ উপজেলায় ৬টি কেন্দ্রে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।'