স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে তোড়জোড়। সম্মেলন যতই ঘনিয়ে আসছে পদপ্রত্যাশীদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপসহ দলীয় সিনিয়র নেতাদের সাথে লবিং এবং নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত নেতারা তারা।
সাড়ে ৭ বছরের অধিক কাল পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের কাঙ্খিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরে জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের জল্পনা-কল্পনা ও ভাবনার অন্ত নেই। অনেকে আবার হিসেব কষছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলো আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সম্মেলন। কারা হচ্ছেন আগামীতে জেলা আওয়ামীলীগের প্রধান দুই কর্তাব্যক্তি এই আলোচনায় চায়ের কাপে ধোয়া তুলছেন তুণমূলসহ সাধারণ মানুষ। তবে যারাই হোক কর্তাব্যক্তি তাতে সমস্যা নেই, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায় জেলা আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অবসান। ১৭ সেপ্টেম্বরের এই সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অবসান হবে না কী আরও বাড়বে এটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কাছে।
জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূলে নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ দুই পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। এখনও পর্যন্ত কোন প্রার্থী নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতার কথা ঘোষণা না করলেও ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণা। তবে কাদা ছোড়াছোড়িও কম নয়।
সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, নরসিংদী-১ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক), নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রিয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ, সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার।
বিভক্ত হয়ে পড়া গ্রুপ দুটির নেতারা চাইছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ তাদের নিজেদের দখলে নিতে। তার জন্য ইতোপূর্রে কাউন্সিলর ও ডেলিকেটর বাড়াতে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে গ্রুপ দুটির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে সম্মেলন করা হয়।
এদিকে প্রত্যাশিত পদ নিজের দখলে নেতারা যে যার মত দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এবং ছুটছেন কেন্দ্রিয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে। চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং ও সখ্যতা। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ফেইসবুকে পদপ্রত্যাশীদের অনুসারীরা প্রিয় নেতার সাফাই গেয়ে চালাচ্ছে জনমত জড়িপ। চাইছেন সমর্থনও।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামীলীগের বিভাজন প্রভাব পড়েছে উপজেলা কমিটিসহ তৃণমূল পর্যায়েও। মূলত জেলার পদবঞ্চিত কিছু নেতা একটি প্লাটফর্মে ও পদবহাল নেতারা তাদের নিজস্ব বলয়ে দলীয় রাজনীতি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। তাদের এই বিভক্তির রাজনীতি প্রভাব ফেলেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনেও। তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মীরা কোন্দলের রাজনীতি পছন্দ করেন না তারাও বাধ্য হয়ে জেলার কোন্দলের রাজনীতির কারণে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শীর্ষ নেতারা তাদের পছন্দ মত নেতাকর্মী দিয়ে কমিটি গঠন করায় অনেকে অবমূল্যায়িত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের ফলে অনেকে রাজনীতি বিমুখ হয়ে নীরব হয়ে পড়েছেন। দলের প্রায় প্রত্যেক কর্মীই কোন না কোন নেতার অনুসারী হয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এতে দলীয় কোন্দল, দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্য রূপ নেয়। ফলে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষমতাশীন এই দলটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী জানান, আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে পারবেন এবং যেসব নেতারা কোন গ্রুপিং এর রাজনীতিতে জড়িত নয় তাদের দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে জেলাজুড়ে দলীয় কোন্দলের অবসান ঘটাতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করলে দলের ভাবমূর্তি আরও খারাপের দিকে যাবে। বর্তমানে দুই গ্রুপের কোন্দলের রাজনীতির কারণে প্রকৃত ত্যাগী নেতা কর্মীরা কোণঠাসা অবস্থানে। এর পরিবর্তন দরকার।
জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব বলেন, কেন্দ্রিয় নির্দেশনামতে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সকল নেতাকর্মীদেরই প্রত্যাশা এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের আভ্যন্তরীণ সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে। সম্মেলনে যে কেউ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে নির্বাচিত হউক তাদের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামীলীগকে আরও সুসংগঠিত করবো সেই প্রত্যাশা করি।
এর আগে দীর্ঘ এক যুগ পর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে নজরুল ইসলাম হিরু সভাপতি ও আব্দুল মতিন ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রি নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে সভাপতিÑসাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। পৃথকভাবে পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি।