
স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরায় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে উপজেলার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক, ঢাকা, সমবায় ভবন (৩য় তলা) আগারগাঁও এই বরাবর সভপতি ও সদস্য পদে ২জনের নাম উল্লেখপূর্ব অন্তর্বতী কমিটির জন্য আবেদন করা হয়।
এদিকে জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা দুর্নীতিবাজ সবুজ'র প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক হানিফ উদ্দিন মোল্লা (সবুজ) সভাপতি, মইদুল ইসলাম সরকার ও বাজিব মোল্লাকে সদস্য করে মোট ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি অন্তর্বতী কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি অনুমোদনের পর দুর্নীতিবাজ সবুজ ও তার কমিটির অপর দুই সদস্য তারই ছোট ভাই রাজিব মোল্লা এবং অপর সদস্য মইদুল ইসলাম সরকারের ছবি সম্বলিত একটা ব্যানার রায়পুরা বিআরডিবি কার্যালয়ের সামনে টানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি কমিটির অনুমোদনের বিষয়টি প্রচার করতে থাাকে।
অপরদিকে কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি ছড়িয়ে পর রাযপুরা উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের বর্তমান কমিটির দুইজন ভাইস চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে চলমান নির্বাচনে চেয়ার প্রতিকে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া আলফাজ উদ্দিন মিঠু রাযপুরা বিআরডিবি দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে কার্যালয়ে গেলে রায়পুরা বিআরডিবির কার্যালয়ে কমিটির অনুমোদনের বিষয়ে তাদের জানান। তবে তাদের পক্ষ থেকে কমিটির বিষয়ে কোন প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। পরে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নরসিংদী সমবায় কার্যালয়ে এসে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় সমবায় কার্য়ালয় থেকে তাদেরকে রাযপুরা বিআরডিবির বর্তমান সভাপতি জাকির হোসেনের স্বাক্ষরিক তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এর সাথে সংযুক্তি করা হয় উপজেলার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি সদস্যদের স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণী। ওই দুটিতে হাতে নিলে প্রস্তাবনা পত্রটি সাথে সংযুক্ত করা সংগঠনের সভার কার্যবিবরণী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ দেখানো হয়েছে এবং সেখানে দুই ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের স্বাক্ষর দেওয়া আছে যা তাদের নয় বলে জানান তারা।
আলফাজ উদ্দিন মিঠু বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিআরডিবির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে তিনসদস্যে একটি কমিটির অনুমোদন আনে প্রতারক হানিফ উদ্দিন মোল্লা (সবুজ)। সে শুধু সভাপতির স্বাক্ষরই জাল করেনি। প্রস্তাবনাপত্রটির সাথে রেজুলেশনের যে কপি দিয়েছে তাতে উপস্থিত সদস্য হিসাবে যাদের দেখানো হয়েছে তাদের স্বাক্ষরও জাল। শুধু তাই নয় রেজুলেশনে যে তারিখ দেখানো হয়েছে ওইদিন রায়পুরা বিআরডিপির কোন সভাই হয়নি।
যারা জাল স্বাক্ষরে ও রেজুলেশন সৃজন করে ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এ কমিটির অনুমোদন এনেছে অতিসত্ত্বর তাদের এই কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির নিয়ম ও বিধি মতে একটি অন্তর্বতী কমিটি গঠন করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে স্বাক্ষর জালিয়াতির সাথে জড়িত হানিফ উদ্দিন মোল্লা সবুজের সাথে যোগাযোগের জন্য (০১৯০৫০৫৭৯০১) এই নাম্বারে কয়েক দফা বেশ কয়েকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
পরে এ ব্যাপারে মইদুল ইসলাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনব বলেন, কিভাবে ওইখানে আমার নাম লেখা হলো কেন লেখা হলো এ বিষয়ে অবগত নই। আর কে বা কারা স্বাক্ষর জাল করেছে তাও জানিনা।
এ ব্যাপারে রায়পুরা বিআরডিবির বর্তমান সভাপতি জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে, কারো কমিটির নাম প্রস্তাব করে এমন কোন কাগজে তিনি স্বাক্ষর করেননি বলে জানান। তিনি বলেন, আমি কারো নাম প্রস্তাব করে কোন কাগজে স্বাক্ষর করিনি। যদি এমনটা হয় তবে সেটি জাল ও ভুয়া। আমি শুধু বলবো কারো স্বাক্ষর জাল করা ঘৃণিত একটি কাজ।
রায়পুরা উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা কর্মকর্তা ইয়াসিন হোসেন সোহাগ কমিটির অনুমোদনের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠায়নি বলে জানায়। তিনি বলেন, কমিটি আনুমোদনের প্রস্তাবনাটি পাঠানোর বিষয়ে আমরা অবগত নই। কমিটির প্রস্তাবনা পত্রটি সাথে সংযুক্ত করা রেজুলেশনে ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ উল্লেখ করা হয়। সেটি মিথ্যা। ওই তারিখে আমাদের কোন মিটিং হয়নি। তাই আমাদের মিটিংয়ের সবশেষ রেজুলেশনের কপি জেলা সমবায় অফিসে ফরোয়ার্ড করে পাঠাব।
রাযপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, আমি বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক তা সমবায় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এবিসয়ে সিদ্ধান্তটা তারা দিবে।
এব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা খাদিজা-তুল কোবরার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টির সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আজ (মঙ্গলবার) সবাইকে সমবায় কার্যালয়ে আসতে বলেছি। আগে তাদের সাথে কথা বলে পুরোপুরি জেনে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
উল্লেখ্য, রায়পুরা উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারন করে গত ১ জানুয়ারি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তফসিলে নির্বাচনের ভোটগ্রহনের দিন ৫ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়। সে মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া প্রায় সম্পাদন করা হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ জন সদস্যকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মাঝামাঝি নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হতে আশঙ্কায় নির্বাচন কমিটির সভাপতি/২০২৫ নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন। ইতোমধ্যে বর্তমান কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।