স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির মেয়াধোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নির্বাচন কাজ ত্বরান্নিত করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সমিতির সদস্যদের উপস্থিতিতে সাধারণ সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। আর এই কমিটি গঠনের পর থেকে সমিতির সাধারণ সদস্যদের দলিল প্রতি আরও এক হাজার টাকা করে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে।
একদিকে গত কয়েক মাস ধরে অত্র অফিসে কোন সাব-রেজিষ্ট্রার না থাকায়, অন্য অফিস থেকে সাব-রেজিষ্ট্রার হাওলাত করে আনার ফলে দলিল রেজিষ্ট্রি ব্যাপারে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দলিল প্রতি এক হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় যা তাদের জন্য মরার ওপর খারার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, জেলার দলিল লেখকদের আহবায়ক নূর আলম ভূঁইয়া সাম্প্রতিক সময়ে নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের সাধারণ সভা আহবান করে এবং উক্ত সভায় সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়। পরে আহবানকৃত সাধারণ সভার নির্ধারিত দিন নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখা হয়। ওই সাধারণ সভায় তৎকালীন কমিটিকে মেয়াধোত্তীর্ণ ঘোষণা দিয়ে তা বাতিল করা হয়।
পরে সমিতির সিনিয়র সদস্য জহিরুল ইসলামকে আহবায়ক ও এবং অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্য মামুন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ৩ মাসের জন্য একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠু, বাকী ৮ জনকে কার্যনির্বাহী সদস্য হলেন- আতাউর রহমান, আ: আজিজ, কবির হোসেন, আলী হোসেন , দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মাহবুব হোসেন মামুন ও মোকলেছুল হক মানিক। এই আহবায়ক কমিটি পরবর্তী কমিটি গঠনের নির্বাচন প্রকিয়া সঠিকভাবে পালন করবে এবং সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে।
জানা যায়, আহবায়ক কমিটি গঠন করার পর থেকে পূর্বে ন্যায় আর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে জমা না দিয়ে বরং সমিতির কার্যালয়ে দলিল জমা দিচ্ছে দলিল লেখকরা। সাথে দলিল প্রতি সমিতির খরচ হিসেবে ২ হাজার টাকা জমা দিচ্ছেন এবং অফিস খরচ হিসেবে আবও ২ হাজার টাকা করে। জমা দিতে হচ্ছে। পূর্বে সমিতির খরচ হিসেবে এক হাজার টাকা করে নিলেও বর্তমান কমিটি তা ২ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।
এব্যাপার কমিটির সদস্য (যিনি দলিল ও টাকা জমা নেন) আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সমিতির টাকা আমি নেই। আগে এক হাজার টাকা নেওয়া হতো কিন্তু বর্তমানে দুই হাজার টাকা কেন নেওয়া হয়? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আগের কমিটি এখন আর নাই। তাছাড়া আগে যেই লোক ছিল অর্থাৎ শফিক সব টাকা নিয়ে গেছে। তার এমন উত্তরে বলা হয়, আমাদের জানা মতে শফিকের চাকুরিচুত্যি হয়েছে। কিন্তু সে নরসিংদীতেই থাকে তাহলে তার কাছ থেকে সমিতির টাকা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন।
ওপর মহলকে রাজি-খুশি করতে এটাকা তোলা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা নয়। আসলে সামনে ঈদতো তাই সবাইকে বোনাস দেওয়া হবে। এ জন্যই দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছরগুলোতেও সদস্যদের বোনাস দেওয়া হয়েছে।
পরে কমিটির সদস্য সচিব মামুন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা করলে দুই হাজার টাকার বিষয় শুনতেই তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি ফোনে কোন কথা বলবো না, প্রয়োজন হলে আপনি অফিসে আসেন-' বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কমিটি আহবায়ক জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বাপারে তিনি বলেন, আমাদের সামনে ঈদ। তাছাড়া করোনার জন্য দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ ছিল। ফান্ডে টাকা পয়সা নাই। উল্টো অফিস ভাড়া, কারেন্ট বিল পিয়ন খরচ এগুলোতো হচ্ছেই। রোজার মাস বুঝেনতো সদস্যদের বোনাসের বিষয় আছে। তাছাড়া সমিতির টাকা পয়সা শফিক বুঝিয়ে দিয়ে যায়নি। এ বছরের চাইতে বিগত বছরে করোনার জন্য অফিস আরও বেশী বন্ধ ছিল এমন উত্তরে তিনি বলেন না এবছরে মৃত ভাতা দিয়া দিয়া আমাদের ফান্ড শেষ হয়ে গেছে।
এসময় শফিক যদি সমিতির টাকা নয়-ছয় করে তবে তাকে ধরে এনে তার কাছ থেকে সমিতির টাকার হিসেব নেওয়া হচ্ছে না কেন? উত্তরে বলেন, নিব নিব।
আপনার কথা অনুযায়ী সমিতির টাকা শফিকের কাছে রেখে আপনারা পাবলিকের পকেট কাটছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা পাবলিকের টাকা নয় আমাদের লাভের অংশ। দলিল লেখকরা কিভাবে হিসাব করে করে দলিল গ্রহিতারর কাছ থেকে দলিলের খরচের কথা বলার পরেও তিনি বলেন না এটা পাবলিকের পকেট থেকে নয় আমাদের লাভের একটা অংশ আমার সঞ্চয় করছি।
এব্যাপারে কেন্দ্রীয় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নরসিংদীর দলিল লেখকদের অভিভাবক নূর আলম ভূইয়ার সাথে মোবাই ফোনে যোগাযোগ করার জন্য বার বার ফোন করলেও মোবাইলটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।