হলধর দাস: নরসিংদীতে জেলা ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিচতলায় প্রথম দফায় এবং রাত সাড়ে ৯ টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতলে আরেক দফায় সংঘর্ষ হয়। এরপর, আহত ১৪ জন জরুরী বিভাগ থেকে টিকিট কাটলেও চিকিৎসা নেয় ১০ জন।
আহত ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে নরসিংদীতে আসেন। তিনি নরসিংদীতে সভা শেষ করে চলে যায়। পরে সন্ধ্যায় নরসিংদীর চিনিশপুরস্ত জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে সভার শুরুতেই বসার স্থান নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত হয় ।
সামনের দিকের কিছু চেয়ারে জাহিদ হোসেনের কর্মীরা বসতে গেলে তাঁদের বাঁধা দেন ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদ। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারিতে রূপ নেয় । এ সময় জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায় । রাত ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসা নিতে আসা নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছিদ্দিকুর রহমান গ্রুপের কর্মীরা। এসময়, আহতদের মধ্য থেকে আরও চার জনকে কুপিয়ে এবং হাসপাতালের জরুরী বিভাগের একটি কক্ষে ভাংচুর করে চলে যায় নাহিদ গ্রুপের সদস্যরা ৷
ঘটনায় যারা জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা হলেন, পৌর শহরের বাসাইল এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মিনহাজুর রহমান, দাসপাড়ার ডালিম মিয়ার ছেলে রিপন (২২), সদরের আলোকবালি এলাকার ফুরকান মিয়ার ছেলে (২৫), চিনিশপুরের ছানা উল্লাহর ছেলে তৌফিক(২৭), ব্রাহ্মন্দী এলাকার জাকিরের ছেলে জাহিদ হোসেন জাপ্পি (২৮), একই এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৭), সংগীতার নাসিরুদ্দিনের ছেলে জীবন (২০), নজরুল ইসলামের জাহিদ বিন রাফি (২২), আবুল কাশেমের ছেলে অয়ন, বাবুল মিয়ার ছেলে শিমুল ( ২৮), দাসপাড়ার দানিশ মিয়ার ছেলে শিপন (২৫), সাহেপ্রতাপের খোরশেদ এর ছেলে সানভির আলম নিবিড় (২৫)।
এছাড়া আরও অন্তত ৪ জন আহতের নাম পাওয়া যায়নি। তারা সকলেই জাপ্পি গ্রুপের সদস্য এবং স্থানীয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী।
আহত ছাত্রদল নেতা জাহিদ হোসেন জাপ্পি বলেন, নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আবারও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের চারজনকে কুপিয়ে আহত করেছেন নাহিদ ও তাঁর কর্মীরা। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা রাজপথে ছিলাম। আর তিনি (নাহিদ) ছিলেন জেলে। সম্প্রতি জেলা আইনজীবী সমিতিতেও তাঁর নেতৃত্বে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই ছাত্রদল নেতার হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি তিনি। তাঁর বিচার করা না হলে নরসিংদীকে তিনি অপরাধের রাজ্যে পরিণত করবেন।’
ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কার্যালয়ে সামান্য বিষয়ে কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। আমাকে আহত করা হয়েছে—এমন গুজব ছড়ানোর পর আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভেবেছিলেন আমি হয়তো নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছি। তাঁরা আমাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হামলার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। যদি হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।’
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে সংর্ঘষ হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে আবার হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।