
মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে থাকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নরসিংদীর মাধবদীতে আহত হওয়া সেই রিক্সাচালক আইনুদ্দিন অবশেষে মৃত্যুর কাছে হারমানলেন। আহত হওয়ার দীর্ঘ সাত মাস সাতদিন পর মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যূবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি
আইনুদ্দিনের মৃত্যু খবর বড় ভাই রফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘ সাত মাস সাতদিন আহত থাকাকালী সময়ে আইনুদ্দিন ঢাকা মেডিকেল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সিএমএই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।
জুলাই আগস্টের গণ আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই নরসিংদীর মাধবদীতে পুলিশের গুলিতে আহত হয় রিক্সাচালক আইনুদ্দিন। মৃত্যুকালে আইনুদ্দিনের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। তার স্ত্রী পুত্র বলতে কিছু ছিল না। বেশ কয়েকবছর আগে মাধবদী এলাকায় সে বিয়ে করলেও তার সেই সংসার বেশিদিন টিকেনি। তার স্ত্রী তাকে ফেলে অনেক আগেই চলে গেছে। নরসিংদীর মাধবদী পৌর শহরের বিরামপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সে গত ২৬ বছর যাবত ওই এলাকায় রিকশা চালিয়ে আসছেন।
নিহত আইনুদ্দিন দিনাজপুর জেলার পীরেরহাট বটতলী এলাকার বিলাত আলীর ছেলে। সে মাধবদী বিরামপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাসায় থেকে রিক্সা চালিযে জীবিকা নির্বাহ করতো।
নিহত আইনুদ্দিন ছোট ভাই জয়নুদ্দিন জানান, আহত আইনুদ্দিনের মাথায় কয়েকটি ছিটা গুলি লাগে। আহত হওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে সুস্থ হলে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে চলে যায় সে। সেখানে তার নিজের নামে থাকা ৪ শতাংশ জমি ছিল সেটা বিক্রি করে স্থানী হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেই। হমি বিক্রির টাকায় ওষদের খরচসহ আনুসাঙ্গিক খরচ চালাতো। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তার চোখের আলো দিন দিন কমে আসছিল। মাঝে মধ্যে মাথার যন্ত্রনাটাও প্রকোট আকার ধারণ করে। সেসময় পার্শ্ববর্তী বেডের রোগির সাথে থাকা একজন ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয় আহত আইনুদ্দিনকে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ঢাকায় এসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন। সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) তে নেওয়া হয়। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
আইনুদ্দিনের বড় ভাইয়ের রফিকুল ইসলাম বলেন আমরা ছয় ভাই বোন। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন বাবা ভিক্ষা করে যা পেতে তাই দিয়ে চলতো আমাদের সংসার। টানাটানি সংসারে ১৪-১৫ বছর বয়সেই জীবন জীবিকার এ মুহূর্তে আমার যতটা মনে পড়ে ২০০০ সালের আগেই নরসিংদীতে চলে যায় আইনুদ্দিন। সেখানে রিক্সা চালিয়ে বাবা মার জন্য টাকা পাঠাবেন। অল্প বয়সেই তার আয়ের টাকায় একে একে তিন বোনের বিয়ের খরচ যোগান আইনুদ্দিন।
তিনি বলেন, সে যখন অসুস্থ হলো কেউ সাহায্য করতে পারিনি তাকে। নিজের জমি বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছে সে। বিগত আন্দোলনের আহতরা সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সহযোগিতা পেলেও আমার ভাই আইনুদ্দিনের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ।
এসময় নরসিংদী কিংবা মাধবদী থেকে বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতাকর্মী দীর্ঘ এই ৭ মাসের অধিক সময়ে রিক্সাচালক আইনুদ্দিনকে দেখতে আসেনি কেউ বলে জানান তিনি।
দুপুরের পর হাসপাতালের পাঠ চুকিয়ে আইনুদ্দিনের মহদেহ নিয়ে তার ভাইয়েরা দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত ১০টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জগদল গ্রামে গিয়ে পৌছায়। পরে রাত ১১ টায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।