স্টাফ রিপোর্ট: নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পদবঞ্চিতদের সাথে অপর গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবারের এই সংঘর্ষের ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা নেয়ার পথে সাদেকুর রহমান নামে একজন এবং শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুল নামে অপর আরেকজনের মৃত্যূ হয়। এদিকে দুই ছাত্রদল নেতার হত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
এদিকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় কারা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করতে পেরেছে কিনা এ বিষয়ে পুলিশ পক্ষ তাকে কোন তথ্য দেয়া হচ্ছে না।
নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমান (৩৫) নরসিংদীর বাদুয়ারচর গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। অপর নিহত আশরাফুল পৌর শহরে সাটিরপাড়া এলাকার নাজমুল হকের ছেলে ।
চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি, মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকেরা ওইদিনই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাংচুর করেন।
পরে ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা। ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। এর জেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাইন উদ্দিনসহ তিনজনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এতেও ক্ষান্ত থাকেনি পদবঞ্চিতরা।
এরপর ৫ এপ্রিল বিএনপি কার্যালয়ে ফের হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। গত ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় তারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ( ২৫ মে) বিকেলে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবীতে প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শতাধিক পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতা শোভাযাত্রাসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।
শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে জেলখানা মোড় হয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে যাবার পথে প্রতিপক্ষ গ্রুপটি তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। এসময় একটি গুলি এসে সাদেকুর রহমানের মাথায় ও আরেকটি গুলি আশরাফুলের পিঠে লাগলে তারা দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এ সুযোগে প্রতিপক্ষের গ্রুপটি দুটি মোটর সাইকেল ভাঙ্চুর করে এবং মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্রদল নেতাদের মারধোর শুরু করতে থাকে। এতে আরও চার ছাত্রদল নেতা আহত হয়।
এদিকে গুলিবিদ্ধ ছাত্রনেতা সাদেকুল ও আশরাফুলকে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকায় নেয়ার পথে সাদেকুর মারা যায়।
এর ১দিন পর শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যায়। শুক্রবার বাদ আসর বাদুয়ারচর এতিমখানা মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে ছাত্রদল নেতা সাদেকুরকে দাফন করা হয়। অন্যদিকে বাদ এশা শহরের সাটিরপাড়া কুমিল্লা কলোনি মহল্লায় জানাজা শেষে আশরাফুলকে দাফণ করা হয়।
নিহত ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘সবে মাত্র আমার ভাইয়ের লাশ দাফন করেছি। পরে সবার সাথে আলোচনা করে মামলার প্রস্তুতি নিব।
জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা ও সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশে এ হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ দুজনের মধ্যে গতকাল সাদেক মারা যায়। আর শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুলও মারা গেলো। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গতকাল আমি সারাদিন ঢাকায় মিটিংয়ে ছিলাম। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।’
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করতে পেরেছে কিনা এ বিষয়ে পুলিশ পক্ষ তাকে কোন তথ্য দেয়া হচ্ছে না। তবে এ ঘটনা কামাল হোসেন ভূঁইয়া (৬০), কাজী আল আমিন (৩৮) ও কাজী রাসেল (৩০) নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এমনটাই গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের দাবী।
এ বিষয়ে জানাতে নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম’র মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেনি।
পরবর্তীতে ওসি (তদন্ত) হারুণ অর রশিদ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এব্যাপার তেমন কোন অগ্রগতি নেই। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখান কোন সিসি ক্যামেরা না থাকায় ফুটেজও সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এব্যাপারে থানায় এখনও কোন মামলা হয়নি। তবে ওই এলাকার শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগকে ফোন করলে তিনি বলেন, ’গতকালের ছাত্রদলের বিষয়ে কিছু জানতে হলে সদরের ওসিকে ফোন দেন আমি একটু বাইরে আছি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস.এ.এম. ফজল-ই-খুদা বলেন আসলে এব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানিনা। আসলে যারা বিষয়টি তদন্ত করছেন তারাই ভাল বলতে পারবেন। গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয় তদন্তকারীরাই ভালো বলতে পারবে বলে জানান।
জাগোনরসিংদী টুয়েন্টিফোর ডটকম