স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরায় উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। উপজেলার চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের কাট্টাখালি ব্রিজ হতে রাজনগর বোদ্দার বাড়ীর ঘাট পর্যন্ত আধা কিলোমিটার এইচ বি বি (ইটের সলিং) রাস্তার কোন প্রকার কার্যাদেশ পাওয়া ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে কার্যাদেশের আগে রাস্তার মাটি ভরাটের বিষয়টি অবগত নন বলে জানান রায়পুরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন , 'এর কোন দায় বহন করবেনা বাস্তবায়ন সংস্থা।'
রায়পুরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫৯ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৪০ টাকা ব্যয়ে চর আড়ালিয়া ও শ্রীনগর এই দুই ইউনিয়নে আধা কিলোমিটার করে মোট ১ কিলোমিটার এইচ বি বি রাস্তার উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডারের নিময়ানুযায়ী উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে সহকারী ঠিকাদার হিসেবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজটি দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১১ মে পর্যন্ত উপজেলার ওই কার্যালয় থেকে কাজটির কোন প্রকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। অথচ ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে সম্পূর্ণভাবে নদী খননের বালু মাটি দিয়ে চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের আধা কিলোমিটার রাস্তা মাটি ভরাটের কাজ শেষ করা হয়েছে। কার্যাদেশ না পেয়ে তড়িঘড়ি করে মাটি ভরাটের পিছনে কী রহস্য থাকতে পারে এবং বালু মাটির এই রাস্তা কতটা টেকসই হবে? তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার কাছে।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নরসিংদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন কাজ চলে আসছে। চর আড়ালিয়া ইউনিয়নে এ কার্যক্রম চলমান আছে।
নিয়মানুযায়ী নদী খননের এসকল মাটি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, গোরস্থান, নদী তীরবর্তী বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণে বিনামূল্যে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সহকারী ঠিকাদার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই মাটি রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য ভরাট করে। এতে করে তিনি মাটি ভরাটের জন্য মোটা অংকের টাকা থেকে বেঁচে গেছেন অপরদিকে বঞ্চিত হয়েছেন এলাকার অনেক ধর্মীয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, রাস্তার উন্নয়ন কাজের বালু ভরাটের কালে চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার ওমরা হজ করতে সৌদি আরব অবস্থান করছিলেন। ঈদের আগেই নদীর এ অংশের ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কাজ শেষ হয়ে যাবে তাই চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার সৌদি আরব থেকেই তার লোকদেরকে রাস্তায় বালু ভরাটের জন্য নির্দেশ দেয়।
এর ফলে কৌশলে বিনা পয়সায় রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ করে নেন। আর এই মাটি ভরাটের কাজ দেখিয়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার সংস্থা থেকে সহকারী ঠিকাদার হিসেবে কাজটি বাগিয়ে নেয়।
দানেস মিয়া নামে ষাটোর্ধ্ব একজন বলেন, 'এই রাস্তাটির সংস্কার করা হলে এলাকার উপকারে আসবে। তবে নদী থেকে তোলা বালু দিয়ে রাস্তার মাটি ভরাট করা হয়েছে। এই মাটি কতক্ষণ থাকবে এর ঠিক নেই । বালু মাটি কোন অবস্থায় টেকসই হবেনা। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার মাটি সরে রাস্তা ভেঙ্গে পড়বে।'
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার বলেন, 'কেউ যদি বলে এক মুট মাটিও নদী থেকে তুলে দিয়েছি তবে আমি আর চেয়ারম্যানি করব না। স্বেচ্ছায় চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াব।'
ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারি কামাল মোল্লার সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমি অবগত নই। চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানাব।'
পরবর্তীতে তিনি বলেন, 'চর আড়ালিয়ার রাস্তার কাজ আমি হাসান চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তাই বিষয়টি তিনি বুঝবেন।'
রায়পুরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ' এখনও পর্যন্ত এ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। কার্যাদেশের আগেই কোন কাজ করে থাকলে এর দায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে সাইড ভিজিট করবো। রাস্তা যাতে টেকসই হয় আমরা সে রকম ব্যবস্থা নিব। কোন অবস্থাতে উন্নয়ন কাজের গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না।'