• নরসিংদী
  • সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন দালাল ও মাদক সেবীদের আখড়া


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০১:২৯ এএম
রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন দালাল ও মাদক সেবীদের আখড়া

স্টাফ রিপোর্টার: পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রসূতি মায়েদের সিজারসহ বিভিন্ন অপারেশন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে দেওযার নামে রোগী ও সাথে লোকজনকে ভুলবাল বুঝিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অন্যত্র বাগিয়ে নেওয়াই এদের কাজ। নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন দৃশ্য নিত্যদিনের।  রোগী বাগানো কাজে যারা জড়িতদের স্থানীয়রা  দালাল বলেই চিনে। শুধু রোগী ভাগানোই অনেক সময় এরা ডাক্তারদের লালিত সন্ত্রাসী হয়েও কাজ করে।  আর এসব সন্ত্রাসী দালালরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয় প্রশয়ে থেকে দলীয় প্রভাব বিস্তারে দালালি করে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু দালাল রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেড়ে বসেছিল। ৫ আগস্ট অভূত্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীন হলে সে সব দালালদের এই উৎপাতে ভাটা পড়ে। বেশ কয়েকদিন এদেরকে দেখা যাযনি।বন্ধ থাকে এদের তৎপরতা। তবে তা খুব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতে না যেতেই দালালদের দৌরাত্মবৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বত্রই দালালদের বিচরণ। দালালদের মধ্যে অনেকেই আছে মাদকসেবী। তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতর মাদক সেবন করে। তাছাড়া রাত নামার সাথে সাথে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মাদক সেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে যত্রতত্র মাদক সেবীদের  মাদক সেবন করতে দেখা যায় বলে এলাকাবাসী জানায়।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের দখলে রয়েছে। সন্ধ্যার পর এর ভিতরে যেখানে সেখানে মাদক বিক্রিসহ মাদক সেবন করতে দেখা যায়। শুধু রাতেই নয় দিনের বেলায়ও এর ভিতর মাদক সেবন করা হয়। তবে সেটা একটা বদ্ধ ঘরের মধ্যে। আর সেটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হল রুম। যা কমপ্লেক্স ভবনে তৃতীয় তলায় অবস্থিত। এখানে যারা মাদক সেবন করে তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে দেখেও না দেখার মতো ভান করে থাকে। 

আবার এ সকল দালালেরা অনেক সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের লাঠিয়াল হিসেবেও কাজ করতে দেখা যায়। সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায় কয়েকজন তরুণ ডিউটিরত ডাক্তার  ফাহিমা শারমিন হানির রুমে ঢুকলে তার পাশে তালেব নামে এক দালালকে বসা থাকতে দেখা যায়। দালাল পাশে বসিয়ে রেখেছে কেন ডা. হানির কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন এসময় তালেব ওই তরুনদের হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যথ হয়ে তাকে  সেখান থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এদিকে ডা. হানি তরুণদেরকে অনেকটা ভয় দেখানোর জন্য পুলিশে ফোন দেওয়ার মিথ্যে বান করতে দেখা যায় ভিডিও  ক্লিপটিতে।

স্থানীয় নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সারাদেশে কোথাও আওয়ামী লীগের দখলদারদের দেখা না গেলেও রায়পুরার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন আওয়ামী  দখলদারদের দখলেই রয়েছে। খাবারের সাপ্লাই থেকে নিয়ে সকল প্রকার কাজে এখনও তারাই নিয়োজিত আছে। শুধু তাই নয় এই সকল দখলদাররা  ডাক্তারদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে গজে উঠা বিভিন্ন ডায়গনিক সেন্টারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক কথায় যাদেরকে বলা হয় দালাল। এই সকল দালালরা হাসপাতালে স্বাস্থ্য কমপেক্স এর ডাক্তারদের দিয়ে কোন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নাই তারপরও ব্যবস্থাপত্রে দু এক পরীক্ষা  লিখিয়ে নেয়। এতে করে ডাক্তার ও দালাল উভয়ই লাভবান হয়। 

উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট  রায়পুরা উপজেলা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দালাল মাদক সেবীদের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তাই এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টিকে অতি দ্রুত  দালালদের রাহুমুক্ত পড়ার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।

ভিডিও ক্লিপটির ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহিমা শারমিন হানি'র সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইলে কয়েক দফা অনেকবার ফোন দিয়েও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. খান নূরউদ্দিন মো.জাহাঙ্গীরকেও মোবাইলে পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী সিভিল সার্জন  ডা. সৈয়দ মো. আমিরুল হক শামীম বলেন, বিষয়গুলো আমি অবগত আছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে কোন দালাল বা মাদক সেবী কোন অবস্থাতেই  থাকতে পারবেনা এবং তারা ভিতরে ঢুকতে পারবে না। রাত একটায় রায়পুরার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোন একজন আমাকে ফোন দিয়ে বলে স্যার কয়েকজন লোক মাদক সেবনের জন্য  জোরপূর্বক ভিতরে ঢুকেছে, এখন তারা মাদক সেবন করছে। এমন ফোনকি আমি কখনো কাম্য করেছিলাম।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের স্থান মাদক সেবনের নয়।

কেন রাতের আধারে এবং কারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকে মাদক সেবন করে আর এর জন্য দায়ী কে বা কারা তা খুঁজে বের করা হবে। কোন অবস্থায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হানি  বিষয়টা মিটমাট করা হয়েছে। ড্যাবের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বসে এটা মিটমাট করেছে। তবে এ ব্যাপারে  আমি বলবো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে   একজন চিকিৎসকের রুমে ঢুকে তার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া চেষ্টা করাটা আদৌ শোভনীয় নয়।  

আমি নরসিংদী বিভাগটিকে ঢেলে সাজাতে চাই এ ব্যাপারে আপনাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে।  কয়েকদিনের মধ্যেই আমি রায়পুরা যাবো এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে বসে আলাপ আলোচনা করবো।
 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ