স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানের বাড়ি থেকে ককটেল, হাতবোমা, গান পাউডার ও বোমা বানানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় নিজ বাড়ীতে এসব বোমাসহ বিষ্ফোরক দ্রব্য মজুত রাখার মামলার ৮ আসামির মধ্যে ইমান হাসানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ তার বাড়ী তল্লাশি চালিয়ে বোমা এবং বিষ্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারসহ তাকে আটক করে। এঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য ইমান হাসানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখপূর্বক গত বুধবার নরসিংদী সদর মডেল থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন উপপরিদর্শক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান।
মামলায় আসামী করা ইমান হাসান ছাড়া বাকি ৭ জন স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন। এদের মধ্যে ইমান হাসানকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইমান হাসানকে। ২ নম্বর আসামি আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম সরকার। তবে এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে 'কাইয়ুম মিয়া' হিসেবে। তার নাম ছাড়া অন্যসব কিছু ঠিক আছে।
এছাড়া এজাহারে কেবল এই ২ জনের ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ৬ আসামির নাম ও বয়স উল্লেখ করা হলেও পিতার নাম 'অজ্ঞাত' লেখা হয়েছে। সবার ঠিকানা লেখা হয়েছে 'নরসিংদী সদর উপজেলা'। অন্যান্যরা হলেন- নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম জাহিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, হাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নরসিংদী শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার (শামীম), সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির (রাসেল), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (নজরুল) এবং আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু না জানানো হলেও নরসিংদী জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদের দাবি, এই মামলায় আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম সরকারকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে আগেই একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১৫টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলার অন্য আসামিদের দাবি, তারা এই ঘটনার সাথে কোনোক্রমেই জড়িত নন। কেবল বিএনপির রাজনীতি করেন বলে তাদের ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ইমান হাসানের বাড়ি থেকে ৩টি বিস্ফারক দ্রব্যযুক্ত ককটেল, ৫৪টি ছোট-বড় মার্বেল, ৭৪টি পাথরের টুকরো, ৫টি খালি কৌটা এবং সাদা পলিথিনে মোড়ানো ৫৪০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পরস্পরের যোগসাজশে অবৈধভাবে সাধারণ জনগণের ক্ষতিসাধন ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখায় তাদের (আসামিদের) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
জানা যায়, কেবল ইমান হাসান ছাড়া মামলার বাকি ৭ আসামিই বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত।
আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক শাহ আলম চৌধুরীর বলেন, 'কোনো অপরাধের সাথে জড়িত না থেকেও কেবল হয়রানিমূলকভাবে পুলিশ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।'
নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্য-নির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম জাহিদ বলেন, 'সরকার বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে বলেই এমন গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর কিছু কিছু পুলিশ স্পষ্টত রাষ্ট্রের পুলিশের পরিবর্তে সরকারের পুলিশে পরিণত হয়েছে। এরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে- এমন প্রত্যাশা করছি।'
নরসিংদী শহর যুবদলের সদস্য সচিব শামীম সরকার বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ককটেল, বোমা ও গানপাউডার উদ্ধার করল পুলিশ। আর মামলা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে চলেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।'
আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আসাদ উল্লাহ এব্যাপারে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসান মেম্বারের পরিত্যাক্ত ঘরে পরিকল্পিতভাবে বোমা সদৃশ বস্তু রেখে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাসানো হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের সনাক্তের বিষয়ে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, 'গ্রেফতারকৃত ইমান হাসান জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম বলেছেন, ঘটনার সাথে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাদের নামই আমরা মামলায় উল্লেখ করেছি। তারা বিএনপির নেতা-কর্মী কি না তা আমাদের জানা নেই।'
এব্যাপারে কথা বলতে নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে ফোন করা হলে এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতেই তিনি ফোন কেটে দেন।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো.আল আমিন এ ব্যাপারে বলেন,' ঘটনার সাথে পুলিশ যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিনা অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা করে না। কে কোন দল করেন, সেটা প্রত্যেকের নিজস্ব বিষয়। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আর এখন পর্যন্ত এ মামলায় বিএনপির কাউকে গ্রেফতার করার খবর আমার জানা নেই।'