মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৯টির দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় দলীয় চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
নরসিংদী জেলার ৫টি নির্বাচনী আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তরা হলেন- নরসিংদী-১ (সদর) আসনে লাঙ্গল প্রতিকে ভোট লড়তে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ওমর ফারুক মিয়াকে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন তিনি।
গত ৩ জুন নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ওইদিন জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় গিয়ে ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়ে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটিতে মো. ওমর ফারুক মিয়াকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর মো. ওমর ফারুক মিয়া দলটিকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়ে দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনসহ দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে নিরলস কাজ করে যান। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠন করেন। মো. ওমর ফারুক মিয়া অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে জেলা জাতীয় পার্টিতে আনে আমূল পরিবর্তন।
নরসিংদীতে বর্তমানে জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত একটি দল। দলের চেয়ারম্যান ও সর্বোচ্চ ফোরাম কর্ম নিষ্ঠার মূল্যায়ন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে পল্লীবন্ধু হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রতীক লাঙ্গল তুলে দেন তার হাতে। নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ওমর ফারুক মিয়া নরসিংদীবাসীর দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন।
মো. ওমর ফারুক মিয়া রাজনীতির পাশাপাশি নরসিংদীর বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সমাজ সংস্কারে কাজ করে গেছেন। তিনি নরসিংদী সদরবাসীর কাছে দোয়া ও আর্শিবাদ কামনা করে পল্লীবন্ধু এরশাদের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
নরসিংদী-২ (পলাশ ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) আসনে দলের মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল তুলে দেন মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা এ এন এম রফিকুল ইসলাম সেলিম এর হাতে। শিল্প এলাকা অধ্যূষিত পলাশ নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বিভিন্ন কলকারখানায় চাকরি করেন।
এক সময় এ আসনে এমপি ছিলেন জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা জাতীয় পার্টির এড. দেলোয়ার হোসেন খান। সেই হিসেব বিবেচনা করলে পলাশে জাতীয় পার্টির সমর্থিত ভোটাররা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ আসনটি নিজেদের দখলে আনতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর বিশ্বস্ত জন হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এ এম এম রফিকুল ইসলাম সেলিমকে অনেক আগ থেকেই মাঠ গোছানোর দায়িত্ব দিয়ে পলাশে পাঠান দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
মুন্সিগঞ্জের ছেলে হয়েও নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা পলাশের মানুষকে অল্প কয়দিনের মধ্যেই আপন করে নেয় রফিকুল ইসলাম সেলিম। পলাশবাসীও এর প্রতিদানে তাকে সাদরে গ্রহণ করে। পলাশের সাধারণ মানুষের কাছে রফিকুল ইসলাম সেলিম এখন একটি পরিচিত মুখ, তাই দলীয় প্রধান তার হাতে লাঙ্গল তুলে দেন। এ এম এম রফিকুল ইসলাম সেলিম আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেনহ
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত জেলা জাতীয় পার্টির সম্মানিত সদস্য এ এস এম জাহাঙ্গীর পাঠানকে। জাতীয় পার্টির এই পরীক্ষিত সৈনিক দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জাহাঙ্গীর পাঠান দীর্ঘদিন ধরে পল্লীবন্ধু এরশাদ এর হাতে গড়া জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে শিবপুরবাসীকে লাঙ্গলের কথা জানান দিয়ে আসছে।
দীর্ঘদিন তিনি শিবপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্বে থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করে গেছেন। জাতীয় পার্টিতে জাহাঙ্গীর পাঠানের ত্যাগ ও পরিশ্রমের কথা বিবেচনায় দলীয় চেয়ারম্যান তাকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনের অনুমতি দেন। তিনি শিবপুরবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া ও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে ভোটে অংশ নেবে এড. মো. কামাল উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসা এড. কামাল উদ্দিন মনোহরদী উপজেলা জাতীয় পার্টিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। তার হাত ধরে মনোহরদীতে বর্তমানে জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত।
মনোহরদী ও বেলাব এই দুই উপজেলা নিয়ে নরসিংদী-৪ নির্বাচনী আসনটি গঠিত। এ আসনের মোট ভোটারদের মধ্যে মনোহরদীতে অপেক্ষাকৃত অধিক ভোটার হওয়ায় এড. কামাল উদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেন জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা। মনোহরদী উপজেলার সন্তান একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সর্ব মহলে এড. কামাল উদ্দিনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
এর আগেও লাঙ্গল প্রতীকে এ আসন থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এড. কামাল উদ্দিন নরসিংদীর-৪ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে লড়বেন। তিনি মনোহরদী বেলাববাসীর কাছে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) সংসদী আসনে প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলামকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত করেছে দলের নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রায়পুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী-৫ সংসদীয় আসন। এই আসনে লাঙ্গলের হাল টেনে ধরে রায়পুরার জমিতে ফসল ফলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের আরেক পরীক্ষিত নেতা প্রকৌশলী শহীদুল ইসলামকে। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে লড়বেন তিনি।
রায়পুরায় দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের রয়েছে ব্যাপক পরিচিত। রায়পুরায় পল্লী বন্ধুর হাতে গড়া জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে ও সাংগঠনিক ভীত মজবুত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে গেছেন তিনি। প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম তার মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে
রায়পুরাবাসীর মন জয় করতে পারবেন বলে দলের সর্বোচ্চ মহল তার হাতে লাঙ্গল তুলে দিয়েছেন। প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম লাঙ্গল এর পক্ষে রায়পুরবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনাসহ দোয়া কামনা করেন বলেন, বাংলাদেশে যত উন্নয়ন দেখছে তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান এদেশের উন্নয়নের রূপকার পল্লীবন্ধু হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে। তাই জাতীয় পার্টিকে আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিতে রায়পুরাবাসীর কাছে লাঙ্গল প্রতীকে আরও একবার ভোট চান তিনি।
জাতীয় পার্টির দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়, সাধারণ মানুষের সাথে রয়েছে সম্পৃক্ততা, সর্বোপরি দলের প্রতি একনিষ্ঠ, তাদের বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২০ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে জাতীয় পার্টি। দুই দফায় পাঁচ দিনব্যাপী মনোনয়ন ফরম বিতরণ শেষ হয় ২৪ নভেম্বর। এবার দলটির মনোনয়ন ফরম নেন ১ হাজার ৭৫২ জন। এরমধ্যে ২০ নভেম্বর ৫৫৭টি, ২১ নভেম্বর ৬২২টি, ২২ নভেম্বর ৩৩১টি, ২৩ নভেম্বর ২২৭টি এবং ২৪ নভেম্বর ১৫টি ফরম কিনেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এরপর ২৬ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।