স্টাফ রিপোর্টার : আত্মহত্যা নয় বরং মায়ের পরকিয়ার বলি হয়েছিল মেয়ে সানজিদা আক্তার শিলা (২০)। এমনটাই ধারণা এলাকাবাসীর। প্রায় সাড়ে ৪ মাস আগে গত ১৫ মে নরসিংদীর শাহেপ্রতাপ এলাকা থেকে গলায় ওড়না পেচানো গৃহবধূর শিলার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছিল থানা পুলিশ।
শিলার এই মৃত্যূর বিষয়টি এতোদিনে অনেকটা মাটি চাপা পড়েছিল। কিন্তু মৃত্যূর সাড়ে ৪ মাস পড়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে থানা পুলিশসহ অনেকেই নড়েচড়ে বসেন।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায় যে, সানজিদা আক্তার শিলাকে গত ১৪ মে দিবাগত রাতের কোন এক সময়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও তেমনটাই জানা গেছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর নিহত শিলার মা সাহিদা বেগম নরসিংদী সদর মডেল থানায় হাজির হয়ে গত রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে শিলার মৃত্যূতে একটি অপমৃত্যূর মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এদিকে থানায় এজাহারের পর সদর মডেল থানা পুলিশ শিলা হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে। সেই সাথে হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে শিলার স্বামী ইসতিয়াক আহমেদ (২৫) কে গ্রেফতার করে এবং প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গ্রেফতারকৃত ইসতিয়াক আহমেদ নরসিংদী সদর উপজেলার সাহেপ্রতাপ এলাকার চৌধুরী মো. শহিদুল্লাহর ছেলে এবং নিহত শিলার স্বামী।
এদিকে শিলার মৃত্যূর বিষয়টি নরসিংদীর সাহেপ্রতাপ এলাকাবাসীর মুখে মুখে। শিলা হত্যাকান্ড এখন এলাকাবাসীর আলোচনার মূল খোরাকে পরিনত হয়েছে। যা টক অব দ্যা সাহেপ্রতাপে পরিনিত হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাহেপ্রতাপ এলাকার কাদির মৃধা জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী সাহিদা বেগম ও কন্যা শিলাকে তার সম্পত্তির একটা অংশ লিখে দেয়। যার মূল্য বর্তমানে ১৪/১৫ কোটি টাকা। শিলা কাদির মৃধা দ্বিতীয় স্ত্রী সাহিদা বেগমের একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে লিখে দেওয়া ওই সম্পত্তির পরবর্তীতে মালিক হবে সে। তাই কাদির মৃধার সম্পত্তি হস্তগত করার দুর্বিসন্ধি আটে পার্শ্ববর্তী চৌধুরী মো. শহীদুল্লাহ। তার চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বিয়ে করলেও অপর দুই ছেলেকে রেখেই ছোট ছেলে ইসতিয়াকের সাথে বছর দুয়েক আগে শিলার বিয়ে ঠিক করে এবং যথারীতি তাকে ঘরে বৌ করে ঘরে তুলে নিয়ে আসেন। এদিকে শিলা ও ইসতিয়াকের বিয়ের পর লম্পট শহিদুল্লাহর চোখ পড়ে শিলার মায়ের উপর। সে বিভিন্ন অজুহাতে শিলার মায়ের কাছে আসতে থাকে।
এক সময় তারা পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পর কাদির মৃধা মারা যায়। এতে ইসতিয়াকের বাবা ও শিলার মায়ের সুবিদা হয়। কেননা তাদের দুজনের পরকিয়া প্রেমের বড় বাধাই চলে গেছে। কাদির মৃধার মৃত্যূর পর সাহিদা বেগম একা থাকার অজুহাতে শিলার স্বামীর বাড়ীতে অর্থাৎ শশুড়বাড়ীতে রাত্রিযাপন শুরু করে। রাতেবেলাই নয় দিনের অধিকাংশ সময়ই তিনি শিলার শশুর বাড়ীতে কাটান বলে জানায় এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরও জানায়, রাত্রিযাপনসহ দিনের অধিকাংশ সময় সাহিদা বেগম শিলার শশুর বাড়ীতে থাকার ফলে তিনি তার পরকিয়া প্রেমিক শিলার শশুড়ের কাছাকাছি ও নজরের মধ্যে থাকে। এতে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। হয়তো তাদের এই ঘনিষ্ঠাতার কোন এক সময় তাদের এই সম্পর্ক শিলার নজরে আসে এবং সে এ বিষয়ে ইসতিয়াককে জানায়। এতে শিলা ও ইসতিয়াকের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয় বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
এক পর্যায়ে চরম আকার ধারণ করে এবং শিলাকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করে ইসতিয়াক। এবিষয়ে তার শহিদুল্লাহর ইন্দন থাকতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। আর পরিকল্পনা মাফিক ১৪ মে দিবাগত রাতে শিলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে শিলার মৃত্যূর বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে পাশের রুমে নিয়ে ভিতর থেকে তা বন্ধ করে দিয়ে তার গলায় ওড়না পেচিয়ে জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলিয়ে দেয় এবং সে কৌশলে ওই রুম থেকেবের হয়ে যায়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ইসতিয়াক সাংসারিক কলহের জেরে শিলাকে শাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে কৌশলে শিলাকে তার গায়ের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে পাশের রুমের জানালার সাথে ঝুলিয়ে রাখে।
সদর মড়েল থানা পুলিশ ওইদিনই হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কি জানতে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ইসতিয়াককে নরসিংদীর জজ আদালতের বিজ্ঞ চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে হাজির করে। এদিকে পরকিয়া মজে যাওয়া সাহিদা বেগমের সম্পর্কের পাছে ফাটল না ধরে সেজন্য পুলিশের রিমান্ড আবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি দেন মামলার বাদী শিলার মা। বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে আদলতের বিজ্ঞ বিচারক তার রিমান্ড নামন্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।