মো.শাহাদৎ হোসেন রাজু : স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রথম বারের মত মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করছেন সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামীকাল মঙ্গলবার এ সম্মাননা প্রদান করবেন দেশের ৬৫৪ জন মহিল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। এরমধ্যে নরসিংদী জেলা থেকে সম্মাননা পাবে ১৬ জন মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা।
নরসিংদী জেলার যে ১৬জন মহিলা বীর মুক্তিযুদ্ধা সম্মাননা পাবেন তারা হলেন- নরসিংদী সদর উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার মেয়ে মোসা: সামসুন নাহার বেগম (বেসরকারী গেজেট[২৮৬৩]), আলগী গ্রামের হাজী আব্দুর রহমান গাজীর মেয়ে শরিফুন নেছা হাকিম (বেসরকারী গেজেট[২৭১]), মনোহরপুর গ্রামের আ: খালেক ভূঁইয়ার মেয়ে দিলরুবা বেগম (বেসরকারী গেজেট[২৯৪৫]), বাগহাটা গ্রামের আবু সিদ্দিক ভূঁইয়ার মেয়ে রওশন আরা বেগম (বেসরকারী গেজেট[২৮৫৯]), রাজারদী গ্রামের শৈলেন্দ্রচন্দ্র দাসের মেয়ে প্রীতিকনা দাস (বেসরকারী গেজেট[২৮৪৩] লাল মুক্তিবার্তা [০১০৫০১০৭৭৩]), পলাশ উপজেলার শান্তানপাড়া গ্রামের তনজু মিয়ার মেয়ে রেজিয়া বেগম (বীরঙ্গনা গেজেট[২৩৫]), জিনারদী গ্রামের বিজয় ভূষণ চ্যাটার্জীর মেয়ে মনিকা বাগচী (ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টিছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট[১১৩]), পারুলিয়া গ্রামের গাজী নূরুল হকের মেয়ে নসিবুন আহমেদ ( লাল মুক্তিবার্তা [১০৫০৬০৪৩৬]), বড়িবাড়ি গ্রামের জোগেন্দ্র দে’র মেয়ে বেদনা দত্ত (বীরঙ্গনা গেজেট[৪৪১]), বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের সিরাজুল হক ভূঁইয়ার মেয়ে কহিনূর বেগম (ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টিছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট[১১৯]), বেলাব গ্রামের আবদুল হাই’র মেয়ে হাসনা হেনা (বেসরকারী গেজেট[৩০৮]), ভাটেরচর গ্রামের আম্বর আলীর মেয়ে আয়েশা হক (ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টিছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট [৩৫২৮]), রায়পুরা উপজেলার নবুয়ারচর গ্রামের মৃত আ: আজিজের মেয়ে হাজেরা খাতুন (বীরঙ্গনা গেজেট[৩১৫]), মনোহরাবাদ গ্রামের মৃত জজ মিয়ার মেয়ে হাছিনা আক্তার খাতুন (গেরিলা বাহিনী গেজেট [৯]), আদিয়াবাদ পিপিনগর গ্রামের মৃত আ: আজিজের মেয়ে খোদেজা খাতুন (লাল মুক্তিবার্তা [০১০৫০৪০৯৯৫]), ও শিবপুর উপজেলার নৌকাঘাটা গ্রামের মহেশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে অজ্ঞলী দে (লাল মুক্তিবার্তা [১০৫০২০৭৬০]),
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযথ মর্যাদার সাথে উদযাপন উপলক্ষে গঠিত সমন্বয় উপ কমিটির দ্বিতীয় সভায় মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপর অর্পণ করা হয়।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি একই দিনে একই সময়ে দেশের সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকার ভিত্তিতে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন এবং সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ মোট ৬৫৪ জন মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।
ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
সম্মাননাপ্রাপ্ত সকল মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট বা সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ী ও স্যুভেনিয়র প্রদান করা হবে।
জেলা পর্যায়ে যথাযথভাবে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি উদযাপনের লক্ষ্যে সকল নরসিংদী জেলা জেলা প্রশাসক আবু নাইম মোহাম্মদ মারুফ খান ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সাথে অনলাইনে সংযুক্ত থাকবেন।
অনুষ্ঠানটি সর্বাত্মকভাবে সফল করতে ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলার মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরুপভাবে ক্রেস্ট বা সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ী ও স্যুভেনিয়র প্রদান করা হবে।
এ অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করবেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা পেতে যাওয়া নরসিংদীর মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রীতিকনা দাস তার অভিব্যপ্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, নিজের চোখের সামনে অনেক লড়াই- সংগ্রাম দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে ছিল। সেদিন আমরা কোন ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি। বরং দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশ মাতৃকার টানে সেদিন আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। দেশকে স্বাধীন করি। নারীরা এখনও যেকোন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে পারবে। আমাদের সমাজে নারীরা কারো থেকে কম নয়।
তিনি বলেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূতি এবং রজয়জয়ন্তী এই সময়টাতে আমাদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। নরসিংদীর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যারা আমাদের জন্য এ আয়োজনটা করেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তার কারণ হলো র্দীঘ ৫০ বছর পর নারী মুক্তিযুদ্ধাদের জাতির সামনে এনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সম্মাননা প্রদান করা এটা সকল নারী সত্ত্বাকে সম্মান দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, নারীরা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ নয় এর আগে যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম অংশ নিয়েছিলো। নারীরা ৫২’র ভাষা আন্দোলন ৬২’র ছাত্র আন্দোলন ও ৬৯’র গণঅভুত্থানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আমি নিজে ৬৯’র গণঅভুত্থানে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছি।