স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর বেলাবতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অনাস্থা এনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। উপজেলার দক্ষিণধুরু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের'র বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যগণ।
সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণদর্শনোর জন্য রেজিস্ট্রি ডাক যোগে তাকে পর পর তিনটি পত্র পাঠানো হলেও তিনি কমিটির সামনে উপস্থিত হয়নি বা পত্র মারফত এর কোন উত্তর দেয়নি। ফলে কমিটির সদস্যরা তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন।
প্রধান শিক্ষক আবু তাহের'র সাময়িক বরখাস্ত'র অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে প্রেরন করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
এদিকে অভিযোগ থেকে পরিত্রান পেতে চতুর প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া'র বিরুদ্ধে ওল্টো অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, দক্ষিনধুরু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের স্থানীয় হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিল ভাউচার একক ভাবে অনুমোদন করা, বিদায়ী ছাত্রদের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় করা।
বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন মেরামত, পাঠ্যবই ক্রয়, ডায়েরী ও পরিক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা, বিভিন্ন প্রকাশনীগুলোর সাথে কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, বিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যক্তিগত কাছে ব্যবহার, বিদ্যালয়ের শৃংখলাভঙ্গ হয় এমন কাজের নেতৃত্ব দেওয়া, নিরীহ শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, স্বেচ্চাচারিতা এবং পরিচালনা কমিটির যুক্তিসঙ্গত ও আইনানুগ আদেশের অবাধ্যতাসহ ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়া ও অন্যান্য সদস্যরা তার চক্ষুশুল হয়ে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষক আবু তাহের সভাপতি ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের পাশ কাটিয়ে মনগড়া ভাবে একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সাথে অসাদাচরণের জন্য গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয় শিক্ষক কর্মচারীরা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, বর্তমান কমিটি গঠনের শুরু থেকে প্রধান শিক্ষক আবু তাহের কমিটিকে অসহযোগীতা করে আসছে। এর ফলে গত ২১ জুন সভাপতি আবুল কালাম তৎকালীন বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিনের বরাবর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিহা, অসহযোগীতার অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কমিটি গত ২৮ জুলাই শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ, বিদ্যালয়ে না এসেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বর্তমান কমিটির নির্বাচিত হবার পর বারবার নিমন্ত্রন দেওয়ার পরও সভায় উপস্থিত না হওয়া, বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা, বিদ্যালয়ের রেজুলেশান ও নোটিশ খাতা বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার করতে না দেওয়া এবং সেগুলো বাসায় নিয়ে রেখে দেওয়া, বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে দীর্ঘদিন আগে ৩৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া, সভাপতির সাথে ব্যাঙ্গাতক ও অশালীন আচরণ করা, নব নির্মিত ভবনের ঠিকাধারী সংস্থা কাছ থেকে বে-আইনী ভাবে ৩ লক্ষ টাকা কমিশন গ্রহন, শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া, ঈদুল আযহায় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বোনাস না দেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে কমিটি। প্রথম নোটিশের জবাব না দেওয়ায় পরবর্তীতে দেওয়া হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ দর্শানো নোটিশ। তারও কোন জবাব না দিলে গত ১২ সেপ্টেম্বর কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক আবু তাহের সাথে আমাদের খুব একটা বনিবনা হয়না। তিনি একটু উগ্র মেজাজের লোক। ওনার এই উগ্র মেজাজের জন্য সবাই উনাকে ভয় পায়। তিনি বিদ্যালয়ে না এসেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যায়। তিনি সবার সাথে খারাপ আচরন করে। তার এ আচরণে আমরা তাকে অনাস্থা দিয়েছি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকা মো. বাহাউদ্দীন ভূঞা বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন রূপ তোয়াক্কা না করে তার একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন। তার নানাবিদ অনিয়মের কারণে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পাশাপাশি আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়। সহকর্মীদের সাথে অসাদাচরণের জন্য অন্যান্য শিক্ষকরাও তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ভূইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কোন মিটিং আসেনা। নোটিশ খাতা রেজুলেশান বহি বাড়িতে নিয়ে যায়। সে কোন কাজে কমিটির সাথে সমন্বয় করে না। তার বিরুদ্ধে কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকরা অতিষ্ঠ। শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছে। কমিটির সদস্যরাও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে । কিন্তু আমাকে হেয় করার জন্য উল্টো আমার বিরুদ্ধে বোর্ডে মিথ্যা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবু তাহের'র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে আমিও বোর্ডে একটি অভিযোগ দিয়েছি। যা চলমান।
বেলাব উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ভূইয়া জানান,প্রধান শিক্ষক সভাপতির বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ অভিযোগের তদন্ত বর্তমানে চলমান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সভাপতির বিরুদ্ধে দেওয়া একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তবে প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানো নোটিশের বিষয়টি অবগত থাকলেও সাময়িক বরখাস্তের ব্যাপারে আমার জানা নেই।