স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হায়দার মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার (৪ জুন) বাদ মাগরিব রাজধানীর আসিউরেন্স সিটি আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যু হয় (ইন্নালিল্লাহি...রাজেউন)।
মৃত্যুকালে এই মহান নেতার বয়স হয়ে ছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
কামাল হায়দার দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ছিলেন। তিনি১৯৪৭ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের বৈলাব গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম ইদ্রিস আলী মাস্টার।
জানা যায়, কামাল হায়দারের সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে ন্যাপ মোজ্জাফর এর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন কামাল হায়দার।পরবর্তীকালে তিনি ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
আশির দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে তিনি ১৫ দল ও ৮ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা ছিলেন এবং ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ছিলেন। নরসিংদী ৩ (শিবপুর) আসন থেকে ১৯৮৬ সালে তিনি ৮ দলীয় জোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীকালে গণফোরাম ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও যুক্ত হন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত থেকেছেন। বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন এবং গণমানুষের রাজনীতির পক্ষে তিনি সারা জীবনব্যাপী নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। কামাল হায়দার ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত গেরিলা বাহিনীর ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। অথচ শিবপুরে রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা থেকে তার নাম বাতিল করা হয়। একসময় তিনি সাংবাদিকতা পেশায় বেছে নিয়েছিলেন।
কামাল হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগে অর্নাস ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের সিনিয়র রাজনীতিবিদ, তোফায়েল আহমেদ , আমির আমু, রাশেদ খান মেনন উনাদের স্মৃতিচারণে অনেক সময় আলোচনার টেবিলে কামাল হায়দারের নাম স্থান পায়।
ঢাকার মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তার নিজ বাসভবন প্রাঙ্গনে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (৫ জুন) নরসিংদীর শিবপুরের বৈলাবো গ্রামে তার নিজ বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হবে।